বাংলায় প্রধানমন্ত্রীর সফর মানেই বিজেপির বড় আয়োজন, তাতেই থাকেন প্রায় সব রাজ্যস্তরের নেতা। কিন্তু ব্যতিক্রম হিসেবে ফের শিরোনামে দিলীপ ঘোষ। শুক্রবার দমদমে সেন্ট্রাল জেলের মাঠে নরেন্দ্র মোদীর জনসভা ঘিরে যখন রাজ্যজুড়ে উন্মাদনা, তখনই ভিনরাজ্যে উড়াল নিলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। এবার গন্তব্য বেঙ্গালুরু, যেখানে তিনি দেখা করবেন আধ্যাত্মিক গুরু শ্রীশ্রী রবিশঙ্করের সঙ্গে।
এটাই প্রথম নয়। মাসখানেক আগে দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রীর সভার দিন সকালেই দিল্লি উড়ে গিয়েছিলেন দিলীপ। এবারও সেই একই ছবি— মোদীর সভার কয়েক ঘণ্টা আগে ভিনরাজ্যে উড়াল। ফলে বিজেপির ভেতরেই শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। অভিমান থেকে কি এই দূরত্ব? নাকি অন্য কোনও কৌশল?
কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ বলেন, “আমি বেঙ্গালুরু যাচ্ছি শ্রীশ্রী রবিশঙ্করজির সঙ্গে দেখা করতে। একটা মিটিং অনেক দিন ধরে ঝুলে ছিল। ওরা চিঠি দিয়ে ডেট কনফার্ম করেছে, তাই যাচ্ছি। কালই ফিরে আসব।”
প্রধানমন্ত্রীর সভার দিনই কেন যাওয়া, এই প্রশ্নে দিলীপের যুক্তি, “আজ আমার কলকাতায় কোনও কাজ নেই। প্রধানমন্ত্রী আসছেন, ভাষণ দেবেন— আমি মোবাইলেই শুনে নিতে পারি।”
দিলীপ বরাবরই সোজাসাপটা মন্তব্যের জন্য পরিচিত। এদিনও বললেন, “দিলীপ ঘোষ কোনওদিন অভিমান করে না। ছোটবেলা থেকে কাজ করছি, মানুষের অভিমান ভাঙিয়েছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমার মতো হাজার হাজার কর্মী আছেন। পার্টি যাকে যোগ্য মনে করবে, তাকেই কাজ দেবে। আমার এখন কোনও দায়িত্ব নেই, তাই অন্য কাজে সময় দিচ্ছি।”
আগামী বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হবেন কি না, এমন প্রশ্নে দিলীপের উত্তর, “তিন বার ভোটে লড়েছি— দু’বার নিজের পছন্দে, একবার পার্টির নির্দেশে। এবার পার্টি যদি মনে করে আমার দরকার নেই, আমি অন্য কাজ করব। এই নিয়ে আমি ভাবি না।”
তিনি আরও বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তন চাইছে মানুষ। বিজেপিকে আমরা দাঁড় করিয়েছি। মানুষ যদি আশীর্বাদ করে, আমাদের পরিশ্রমে ফল আসবেই।”
রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, মোদীর সফরের দিনে দিলীপ ঘোষের ভিনরাজ্যে চলে যাওয়া বিজেপির রাজ্য রাজনীতিতে অস্বস্তির ইঙ্গিত বহন করছে। অনেকেই মনে করছেন, রাজ্যের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে দিলীপকে দূরে রাখা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের দলীয় সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে।
ভিনরাজ্যে বাংলাভাষীদের হেনস্থার ইস্যুতে সরব তৃণমূল, আর দিলীপের বেঙ্গালুরু সফরের দিনই সেই প্রসঙ্গ তুলেছে শাসকদল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই ইস্যু রাজ্যের নির্বাচনী রাজনীতিতে তৃণমূলের জন্য বড় হাতিয়ার হতে পারে।