একদিনের ঝগড়া কিংবা মার নিষ্ঠুরতা নয়, বধূ নির্যাতনের মামলায় ব্যাখ্যা কলকাতা হাই কোর্টের
প্রতিদিন | ২২ আগস্ট ২০২৫
গোবিন্দ রায়: বধূ নির্যাতনের মামলায় নিষ্ঠুরতা কাকে বলে? ব্যাখ্যা দিল কলকাতা হাই কোর্ট। স্ত্রী, বধূ নির্যাতনের অভিযোগ আনলেও সামান্য ঝগড়া কিংবা চড়-থাপ্পড় বা লাঠি দিয়ে মারার ঘটনা যে বধূ নির্যাতনের মামলায় নিষ্ঠুরতা হতে পারে না তা জানিয়ে দিলেন বিচারপতি অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়।
স্বামীর বিরুদ্ধে এক বধূর আনা এফআইআর খারিজ করে আদালতের পর্যবেক্ষণ, প্রতিহিংসার কারণে স্বামীকে হয়রানির মধ্যে ফেলতেই এই অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালতের মতে, এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে গুরুতর শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন এবং লাগাতার হচ্ছে তার প্রমাণ চাই। বিচারপতি অজয়কুমার মুখোপাধ্যায় বধূ নির্যাতন বা গার্হস্থ্য হিংসার মামলার ক্ষেত্রে নিষ্ঠুরতার ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি)-র ৪৯০ (এ) ধারায় নিষ্ঠুরতার দু’রকম অর্থ রয়েছে। প্রথমত, ইচ্ছাকৃত কিছু আচরণ যা স্ত্রীকে আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করে, তা নিষ্ঠুরতা। স্ত্রীর জীবন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, মানসিক বা শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে, এমন কোনও কাজও নিষ্ঠুরতা। পাশাপাশি, স্ত্রী বা তাঁর পরিবারকে নির্দিষ্ট কিছু চাহিদা (যৌতুক, টাকা, সন্তান) পূরণের জন্য চাপ দেওয়াও ‘নিষ্ঠুরতা’।
জানা গিয়েছে, স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন এবং স্ত্রীধন আত্মসাৎ করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন এক মহিলা। তাঁর দাবি, বিয়ের পর থেকে স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁর উপর মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন করতেন। ২০২২ সালের ৭ জুলাই স্বামী তাঁকে বর্ধমান শহরে মারধর করেন বলেও অভিযোগ। এছাড়া তাঁর সকল স্ত্রীধন আটকে রাখা হয়েছে বলেও দাবি। অন্যদিকে স্বামীর বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে রয়েছেন স্ত্রী। সেই ব্যক্তির সঙ্গেই বর্ধমান শহরে দেখা গিয়েছে স্ত্রীকে। স্বামীর আইনজীবীর দাবি, বধূ নির্যাতন বা স্ত্রীধন আত্মসাতের ক্ষেত্রে ঘটনার তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে অভিযোগ দায়ের হয়নি। তাই বধূ নির্যাতনের মামলা খারিজ করা হোক। স্বামীর আবেদন মঞ্জুর করেছে আদালত।