অর্ণব আইচ: ঘরপালানো কালো ঘোড়া কার? আস্তাবল থেকে পালিয়ে সোজা থানায় ঢুকে পড়েছিল কুচকুচে কালো রঙের ঘোড়াটি। ঘোড়ার মালিক এসে পুলিশের কাছে দাবি করেন, নগদ সাদা টাকা দিয়ে তিনি বিহার থেকে কিনে এনেছেন কালো ঘোড়া। কিন্তু পুলিশ বা আদালত তা শুনবে কেন? ঘোড়াটিও ‘পুলিশ হেফাজতে’ থেকে মহানন্দে চিবোচ্ছে ঘাস বিচুলি। কিন্তু থানায় আর আস্তাবল কোথায়? তাই অল্প আহত ঘোড়াটিকে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে সোজা হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে ঘোড়ার মালিক ঘোড়া কেনার নথিপত্র এনে পেশ করেন আদালতে।
বুধবার আদালত অনুমতি দিয়েছে, ঘরের ঘোড়াকে ঘরে ফেরানোর। পশু চিকিৎসকরা সবুজ সংকেত দিলেই তাকে ফেরত পাবেন মালিক। গত শনিবার রাতে ঘটনার সূত্রপাত। একটি কালো রঙের ঘোড়া গুটিগুটি পায়ে হাজির হয় মধ্য কলকাতার গিরিশ পার্ক থানায়। আসলে বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ হয়ে রামদুলাল সরকার স্ট্রিটে পৌঁছয় ঘোড়াটি। দুলকি চালে ঘোরার সময় তার নজর ছিল রাস্তার পাশে হোটেল ও খাবার দোকানে। কয়েকটি দোকানের মালিক তাকে কিছু খাওয়ানও। হাঁটতে হাঁটতেই সে পৌঁছে যায় গিরিশ পার্ক থানায়। থানার সামনে গাড়ি রাখার জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল সে। কিন্তু তার গলায় বাঁধা ঘুঙুরের মালা দেখেই গিরিশ পার্ক থানার আধিকারিকরা বুঝতে পারেন যে, নেহাত বেওয়ারিশ নয় কালো ঘোড়াটি। বরং আস্তাবল থেকে পালিয়েই এসেছে সে। তাই ঘোড়াটিকে ধরে থানার একপাশে বেঁধে রাখেন পুলিশকর্মীরা। তার জন্য আনা হয় দানাপানি। পেট ভরে খেতে পায় সে।
ততক্ষণ ঘোড়ার সন্ধান না পেয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছেন ঘোড়ার মালিক মহম্মদ সাদ্দাম। খবর পেয়ে রবিবার হাজির হন থানায়। নিজেকে ঘোড়ার মালিক বলে পরিচয় দেন। বলেন, তিনি রাজাবাজারের বাসিন্দা। ঘোড়াটি পছন্দ করে বিহারের মোতিহারি থেকে কিনে এনেছেন। কলকাতায় ঘোড়ার গাড়ির ব্যবসা তাঁর। এই ঘোড়াটি তাঁর গাড়ি টানে। কিন্তু থানা চত্বরে প্রভুভক্তি দেখানো দূরের কথা, ঘোড়াটি একবার মালিকের দিকে তাকিয়েই মুখ ফিরিয়ে নেয়। এতে সন্দেহ হয় পুলিশ আধিকারিকদের। উত্তরে মালিক বলেন, নতুন ঘোড়া, তাই এখনও তাঁর উপর ভক্তি জমে ওঠেনি। যদিও পুলিশ তাঁকে জানায়, ঘোড়াটির পায়ে আঘাত রয়েছে। তার চিকিৎসার প্রয়োজন। পুলিশের পক্ষ থেকে ঘোড়াটিকে পাঠানো হয় ভাঙড়ের চন্দনেশ্বরের একটি পশু হাসপাতালে। আর ঘোড়ার মালিককে পরের দিন আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেয় পুলিশ।
ব্যাঙ্কশাল আদালতে গিয়ে সাদ্দাম ঘোড়াটিকে ফেরত পাওয়ার আবেদন জানান। আদালত তাঁকে দু’দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় নথি পেশের নির্দেশ দেয়। সেই মতো এদিন সাদ্দাম আদালতে গিয়ে মোতিহারি থেকে ঘোড়া কেনার যাবতীয় নথি দেখান। আদালত নথি দেখে পুলিশকে ঘোড়াটি তার মালিককে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়। চিকিৎসকদের পরামর্শমতো চন্দনেশ্বরের পশুহাসপাতাল থেকে সাদ্দাম তাঁর কালো ঘোড়া ফেরত নেবেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।