জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বাংলা ভাষাকে অপমান করার অভিযোগে রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূল বনাম বিজেপির সংঘাত চরমে। কেন্দ্রের শাসকদল তথা রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে রাজ্য থেকে জাতীয় স্তরে সরব হয়েছে তৃণমূল। এই আবহেই কলকাতা পুরসভার কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহারে আরও জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পুরসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কলকাতা শহরের সব দোকান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষায় নাম লেখা বাধ্যতামূলক। তবে, বাংলা ছাড়াও দোকানমালিকেরা তাঁদের পছন্দের অন্য যে কোনও ভাষায় সাইনবোর্ড লিখতে পারবেন। শর্ত একটাই— বাংলা ভাষায় নাম অবশ্যই থাকতে হবে। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, নির্দেশিকা অমান্য করলে প্রথমে নোটিস পাঠানো হবে। এর পরও সাইনবোর্ড সংশোধন না করলে জরিমানার মতো শাস্তি হতে পারে।
এবার বাংলায় নেমপ্লেট না থাকলে দোকান বন্ধ করা হবে। লাইসেন্স রিনিউয়াল করা হবে না। শহরের সব শপিংমল গুলিকে এই মর্মে নোটিশ দিতে চলেছে কলকাতা পুরসভা।
'বাংলায় ব্যবসা করতে হলে, বাংলা ভাষার ব্যবহার করতেই হবে',
শুক্রবার কলকাতা পুরসভার পুর অধিবেশন থেকে এমনটাই ঘোষণা করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
প্রসঙ্গত কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী অধিবেশনে একটি প্রস্তাব রাখেন। এখানে তিনি উল্লেখ করেন যে কলকাতায় সমস্ত শপিংমলগুলোর ভেতরে যে সমস্ত দোকানগুলি রয়েছে, তাদের একটাও নেমপ্লেট বাংলায় লেখা নয়। অথচ শহরের তথা রাজ্যের বৃহত্তর অংশ বাঙালি। বাইরের দোকানের মত শপিংমল গুলিতেও যাতে বাংলায় নেমপ্লেট লেখা হয় তার নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তাব রাখেন তিনি। সেই প্রস্তাবে মেয়র জানান, সব শপিং মলগুলোকে নোটিশ সার্ভ করা হবে। তারপরেও না শুনলে লাইসেন্স রিনিউয়াল করা হবেনা। দোকানগুলো বন্ধ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করব পুরসভা।
সম্প্রতি, কলকাতা পুরসভার সদর দফতরের কাছেই এক দোকানে ইংরেজি ও অসমিয়া ভাষায় সাইনবোর্ড চোখে পড়ে পুরসভার শীর্ষ আধিকারিকদের। সঙ্গে সঙ্গে দোকানমালিককে নোটিস পাঠানো হয়। কয়েক দিনের মধ্যে অসমিয়া ভাষা সরিয়ে ইংরেজির সঙ্গে বাংলা ভাষায় সাইনবোর্ড লাগানো হয়। পুরসভা কর্তৃপক্ষের দাবি, এটি একটি দৃষ্টান্ত— যাতে অন্য দোকানমালিকেরাও নিয়ম মেনে চলেন। যদিও এ নিয়ে এখনও কোনও পূর্ণাঙ্গ লিখিত নির্দেশিকা জারি হয়নি। পুরসভার যাবতীয় সরকারি নথি, ট্রেড লাইসেন্স ও কর বিলের মাধ্যমেই এই নির্দেশ সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “কলকাতা পুরসভা এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন দোকান ও ব্যবসায়িক কেন্দ্রের সাইনবোর্ডে বাধ্যতামূলক ভাবে বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে হবে। অন্য ভাষায় লেখা হলেও বাংলা আলাদা করে লিখতে হবে।”
ভাষা-রাজনীতির এই প্রেক্ষাপটে পুরসভার উদ্যোগকে তৃণমূলের ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষার কৌশল হিসাবে দেখছে রাজনৈতিক মহল। বিজেপির বিরুদ্ধে ‘বাংলা অপমান’-এর অভিযোগ তুলছে তৃণমূল। অন্য দিকে, পুরসভা প্রশাসনিক ভাবে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করছে। উৎসবের আগে শহরের চেহারায় এই সিদ্ধান্ত যে বড় প্রভাব ফেলবে, তা স্পষ্ট করে বলছেন নগর পরিকল্পনাবিদেরা। পুরসভার আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যে কলকাতা পুরসভার বোরোভিত্তিক এই নির্দেশের কথা জানানো হয়েছে।