• মোদি উদ্বোধন করলেন, মেট্রোর চাকা গড়াল, ‘আমরা ঘরে ফিরব কবে?’ প্রশ্ন বউবাজারের গৃহহীনদের
    প্রতিদিন | ২৩ আগস্ট ২০২৫
  • স্টাফ রিপোর্টার: একদিকে শুক্রবার সাড়ম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসপ্লানেড থেকে বউবাজার হয়ে শিয়ালদহ মেট্রোর উদ্বোধন করলেন। অন‌্যদিকে বউবাজারে গৃহহীনরা দিনভর রাস্তায় বসে রইলেন। কলকাতা পুরসভার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড বউবাজারে ২০১৯-এর মেট্রো বিপর্যয়ের ছয় বছর কেটে গেলেও দুর্গা পিতুরি লেন ও স্যাকরা পাড়ার অসংখ্য পরিবার আজও ঘরছাড়া। শুক্রবার দুপুর থেকে দুর্গা পিতুরি লেনে ধরনায় বসেন তাঁরা। ইতিমধ্যে কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে ২৮টি বাড়ির নির্মাণের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে শুধু বাড়ি করে দিলেই হবে না, অন্তত ১০ বছর সেই বাড়ির দায়িত্বও কেএমআরসিএলকে নিতে হবে বলে দাবি বাসিন্দাদের। এদিন ধরনামঞ্চে গৃহহীনদের সঙ্গে কথা বলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে বলেন, ‘‘সোমবার একটি বৈঠক হবে। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা, কাউন্সিলর, যাদবপুর বিশ্ববিদ‌্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। কেএমআরসিএলকেও ওই বৈঠকে ডাকা হবে। কেএমআরসিএলকে বলা হবে বাড়িগুলির দশ বছরে দায়িত্ব যাতে নেয়।’’

    এদিন কলকাতা পুরসভার মাসিক অধিবেশনেও দুর্গা পিতুরি লেনের গৃহহীনদের ভবিষ‌্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্থানীয় কাউন্সিলর কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে মনিটরিং কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন। বলেন, ‘‘মেট্রো কথা দিয়েছিল বির্পযয়ের দু’বছরের মধ্যে ঘর পাবেন গৃহহীনরা। কিন্ত সেই কাজ হয়নি। উল্টে নতুন করে মেট্রো চলাচলের ফলে বির্পযয়ের আশঙ্কা আরও প্রবল হল। অবিলম্বে একটি মনিটরিং সেল তৈরি করুক পুরসভা। সেই প্রস্তাব মেনে একটি উচ্চপর্যায়ের নজরদারি কমিটি তৈরি হয়েছে। মেয়র বলেন,‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ‌্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উচ্চপর্য়ায়ের নজরদারি কমিটি তৈরি হয়েছে। তারা নজরদারি চালাবে।’’ এদিন বিকেলে যখন মেট্রো চাকা গড়াতে থাকে, তখন থালা বাজিয়ে বিক্ষোভ দেখান গৃহহীনরা।

    ২০১৯ এর ৩১ আগস্ট অভিশপ্ত সেই রাতে সর্বহারা হয়ে যান কয়েকশো পরিবার। তারপর থেকে যাযাবরের মতই জীবন কাটছে গৃহহীনদের। ১০বি দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা সুপর্ণা রায়। বর্তমানে তার অস্থায়ী ঠিকানা ৪০ নম্বর আমহার্স্ট স্ট্রিট। তিনি বলেন, “এগারো মাস করে চুক্তি হয় বাড়িওয়ালার সঙ্গে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ ভাড়া দেয়। গত ছ বছরে তিনবার বাড়ি বদল হয়েছে। এর আগে চৈতন‌্য সেন লেনে থাকতাম। বারবার বাড়ি বদলে নানা সমস‌্যা হচ্ছে। পুরনো ঠিকানায় রান্নার গ‌্যাসের সংযোগ নেওয়া ছিল। এখন এক দু বছর অন্তর ঠিকানা বদল করতে হচ্ছে। যে কারণে গ‌্যাসের সংযোগ মিলছে না। কালোবাজার থেকে রান্নার গ‌্যাস কিনতে হচ্ছে। মেট্রোর গাফিলতিতেই আজ আমরা যাযাবরের জীবন কাটাচ্ছি। অসুস্থ স্বামী ও আসবাবপত্র নিয়ে যাযাবরের মত ঘুরতে হচ্ছে আমাদের।”

    আড়াই মাস হোটেলে কাটানোর পর অর্চনা দাসের পরিবারকে সল্টলেকে ভাড়াবাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। এখন তাঁরা কলেজ স্ট্রিটে থাকেন। তিনি বলেন, উত্তর কলকাতায় বাচ্চাদের স্কুল ও টিউশন ছিল। সল্টলেক থেকে বাচ্চাদের পড়াশোনা ও  স্কুল যাতায়াতে সমস‌্যা হচ্ছিল। মেট্রো কর্তৃপক্ষকে বলা হলে তারা বলে নিজেদের মত বাড়ি দেখে নিতে। বাধ‌্য হয়ে কলেজ স্ট্রিটে ভাড়া বাডি় নিয়ে উঠি। আর কত বছর অপেক্ষা করবে। অভিশপ্ত পরিবারের বুকের উপরে দিয়ে মেট্রো চলবে। আমাদের কথা কে শুনবে তখন আর। এদিন চোখের জ্বল মুছতে মুছতে গৃহবধূ বলেন, মাথার ছাদ হারানোর পর থেকে চিন্তায় চিন্তায় গত বছর শাশুড়ি মারা গেলেন। এবার আমরাও কোনওদিন মারা যাব। আমাদের ছেলেমেয়েরাও যাযাবরের মতই কি দিন কাটাবে? একবারও আমাদের কথা প্রধানমন্ত্রী এদিন বললেন না।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)