নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: পলিটেকনিকের ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় পুলিসের জালে কোচবিহারের যুবক। শীতলকুচির বাসিন্দা ওই বিবাহিত যুবককে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হয়। তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে তাকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিস। বৃহস্পতিবার ওই যুবকের বিরুদ্ধে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মৃত ছাত্রীর বাবা।
দু’দিন আগে হোয়াটসঅ্যাপে স্টেটাস দিয়ে আত্মঘাতী হন জলপাইগুড়ি পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রী কেয়া রায় (১৮)। কোতোয়ালি থানার রংধামালি এলাকার বাসিন্দা ওই ছাত্রীর মোবাইল ফোনটি ঘটনার পরই বাজেয়াপ্ত করে পুলিস। ওই মোবাইল ঘেঁটে বেশকিছু ছবি ও মেসেজ মিলেছে বলে পুলিস সূত্রে খবর। ওইসব ছবি ও মেসেজ পাঠিয়ে অভিযুক্ত যুবক মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেল করত কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিস। তবে, ধৃত যুবকের মোবাইল ফোন থেকে ওই ছাত্রীর কোনও ছবি ও মেসেজ পাওয়া যায়নি। থানায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়ার খবর পেয়েই সম্ভবত ওই যুবক তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য সমস্ত ছবি ও মেসেজ ডিলিট করে দেয় বলে মনে করছে পুলিস। সেসব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে পুলিস সূত্রে খবর। জলপাইগুড়ির পুলিস সুপার খণ্ডবাহালে উমেশ গণপত বলেন, মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্তকে কোচবিহার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।
পুলিস সূত্রে খবর, ধৃত যুবকের বছর পাঁচেক আগে প্রেম করে বিয়ে হয়েছে। তার দু’টি সন্তান রয়েছে। সে যে বিবাহিত, সেটা লুকিয়ে পলিটেকনিকের ওই ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় হয় তাদের। বছর খানেক পর ছাত্রী জানতে পারেন, তাঁর ‘প্রেমিক’ বিবাহিত। এরপরই টানাপোড়েন শুরু হয় তাঁদের সম্পর্কে। পুলিস সূত্রে খবর, অভিযুক্ত যুবক প্রথমে মেয়েটিকে বোঝানোর চেষ্টা করে, স্ত্রীকে ডিভোর্স দেবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়। সম্প্রতি ছাত্রীকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছিল ওই যুবক। ‘প্রেমিকা’র ফোন ধরা বন্ধ করে দিয়েছিল সে। এমনকী তাঁর নম্বর মোবাইলে ব্লক করে দিয়েছিল। বারবার চেষ্টা করেও ‘প্রেমিকের’ সঙ্গে কথা বলতে না পারায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন পলিটেকনিকের সিভিলের দ্বিতীয় সেমেস্টারের ওই ছাত্রী।
আত্মঘাতী হওয়ার আগে হোয়াটসঅ্যাপে তিনি যে স্টেটাস দিয়েছিলেন, তাতেও স্পষ্ট, প্রেমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছু কথা বলতে চাইলেও পারছিলেন না তিনি। সেকারণেই নিজেকে ‘শেষ’ করে দেওয়ার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। পুলিস জানিয়েছে, ওই ছাত্রীর সঙ্গে ঠিক কেমন সম্পর্ক ছিল, ধৃত যুবককে জেরা করে জানার চেষ্টা চলছে। সেইসঙ্গে সে ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিস।