• জেনারেটর নেই, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ১৮ খনি শ্রমিক সহ মাঝপথে থমকে ডুলি
    বর্তমান | ২৩ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: ডুলিতে চড়ে কয়লা খাদে নামছিলেন ১৮ শ্রমিক। গভীর, সংকীর্ণ সুড়ঙ্গে হঠাৎই আটকে গেল ডুলি। প্রাণ হাতে নিয়ে অন্ধকার ডুলিতেই আটকে রইলেন ইসিএলের শ্রমিকরা। দেড় ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ ফিরে আসার পর ফের চালু হয় ডুলি। শুক্রবার এই ঘটনা ঘটেছে রানিগঞ্জ থানার বাঁশড়া কোলিয়ারিতে। কয়লা বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করা ইসিএল শ্রমিক স্বার্থে একটি আধুনিক জেনারেটরও কেনেনি বলে অভিযোগ। যার জেরেই এমন বিপর্যয় কোলিয়ারিতে। ঘটনার পর তুমুল বিক্ষোভ দেখান শ্রমিকরা। কাজ বন্ধ করে চলে আন্দোলন। বুধবারই অণ্ডাল থানার শ্যামসুন্দরপুর কোলিয়ারিতে খাদানে জল ঢুকে গিয়ে ভেসে গিয়েছিলেন পাঁচ শ্রমিক। তাঁদের একজনের মৃত্যু হয়। এরপর এই ঘটনা খনি শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 

    ইসিএলে ডিরেক্টর (টেকনিক্যাল) নীলাদ্রি রায়ের ফোন সুইচড অফ থাকায় তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কোলিয়ারির এজেন্ট সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে গেলে তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়েন। তিনি সংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘নো কমেন্ট’। 

    রানিগঞ্জ থানার বাঁশড়ায় রয়েছে ভূগর্ভস্থ কোলিয়ারিটি। কুনুস্তোড়িয়া এরিয়ার অন্তর্গত এই কোলিয়ারিতে এখনও গড়ে ৫০০ টনের বেশি কয়লা উৎপাদন হয়।  সেই কোলিয়ারিতে পরিকাঠামোর বেহাল চিত্র বার বার ফুটে উঠছে। এবার কোলিয়ারির শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে চূড়ান্ত উদাসীনতা ধরা পড়ল। জানা যায়, অন্যদিনের মতোই এদিনও সকাল ন’টায় সময় শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়। বিদ্যুৎ চালিত জীর্ণ ডুলিতে করেই ১৮ শ্রমিক কয়লা কাটতে খাদানে নামছিলেন। সেই সময়েই বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে। বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকায় ডুলি মাঝপথে ঝুলে থাকে। গভীর অন্ধকার খাদে আটকে থাকা ১৮ শ্রমিক তখন ‌ইষ্টনাম জপ করছেন। দেড় ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ এলে ডুলি তুলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। আটকে থাকা এক শ্রমিক লালন সিং বলেন, মাঝে আটকে পড়ায় খুবই ভয় পেয়েছিলাম। যে সংস্থার জন্য কাজ করছি তাঁদের উচিত আমাদের নিরাপত্তা দেখা। 

    বাঁশড়া কোলিয়ারিতে এই ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও একই রকম ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ। বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে আগেও আন্দোলন করা হয়েছিল। আধুনিক জেনারেটর আনার কথাও বলা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। খনির একের পর এক দুর্ঘটনা ও যান্ত্রিক গোলযোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ শ্রমিকরা। শ্রমিকদের একাংশের দাবি, রাষ্ট্রায়াত্তকরণের আগে যেভাবে শ্রমিক শোষণ হতো, সেই অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। স্থানীয় তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি শুভজিৎ মণ্ডল ওরফে উত্তম বলেন, বার বার শ্রমিকরা দাবি জানিয়েছেন জেনারেটর চালু করার। তা করা হয়নি। স্থানীয় সিপিএম গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সঞ্জয় হেমব্রম বলেন, শ্রমিক স্বার্থ নিয়ে চূড়ান্ত অবহেলা করা হচ্ছে।  উদ্বিগ্ন শ্রমিকরা।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)