নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও আরামবাগ: মাসখানেক আগেই মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল পুরুলিয়ায়। ফের সেই স্মৃতি উসকে দিল শনিবার। রাতভর টানা বৃষ্টির জেরে মানবাজার-১ ব্লকের ভালুবাসা অঞ্চলের মাকড়কেন্দি গ্রামে শনিবার সকালে মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই টানা বৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত পুরুলিয়া, বাঁকুড়া আরামবাগের জনজীবন। ফুঁসতে শুরু করেছে কংসাবতী, দামোদর সহ একাধিক নদ-নদী।
মানবাজারে মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত বৃদ্ধের নাম মঞ্জুরা মাহাত(৬৫)। মৃতের ভাইপো ভদ্রলোচন মাহাত বলেন, কাকুর একাধিক মহিষ ও গোরু ছিল। এদিন সকালে গোয়াল থেকে মহিষগুলি বের করে মাঠে বেঁধে আসেন। তারপর ফের বাড়ি আসে গোরুগুলিকে গোয়াল থেকে বের করে মাঠে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেই সময়ই গোয়াল ঘরের মাটির দেওয়াল হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। দেওয়াল চাপা পড়ে কাকু গুরুতর জখম হন। মাথায় চোট পান। মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নামে। খবর পেয়ে মৃতের বাড়িতে যান স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সবিতা মুদি। মানবাজার-১বিডিও দেবাশিস ধর বলেন, গোয়াল ঘরের মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। প্রশাসনের তরফে মৃতের পরিবারকে সবরকম সহযোগিতা করা হবে।
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পুরুলিয়ায় ৮০.৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সর্বোচ্চ ২৭৫.২মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ঝালদায়। জয়পুরে ২৩২.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা। ফুঁসছে কংসাবতী। ঝালদার ব্রজপুরের কাছে গোলা রোড, বাঘমুণ্ডির হরিডি-মাদলা থেকে শুরু করে একাধিক রাস্তা, কজওয়ের উপর দিয়ে জল বইতে শুরু করেছে। বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এদিন পুঞ্চা বাজারে বিক্ষোভ দেখান দাসপাড়া ও বৈষ্ণবপাড়ার বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার রাত থেকে এদিন সকাল পর্যন্ত বাঁকুড়া শহর সহ জেলার প্রায় প্রতিটি ব্লকেই হালকা বৃষ্টি হয়েছে। এদিন বাঁকুড়া শহরের জলছবি অনেকটা বদলে যায়। শহরের কোথাও জল জমে না থাকলেও ভৈরবস্থান, সার্কিট হাউস মোড় সহ কিছু নিচু রাস্তার উপর দিয়ে জল বয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। ওই জল নিকাশি নালা হয়ে দ্বারকেশ্বর নদ ও গন্ধেশ্বরী নদীতে গিয়ে পড়েছে। ফলে শহরের দু’পাশ দিয়ে বয়ে চলা ওই দুই নদনদীর জলস্তর অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টির জল নেমে গেলেও সতীঘাট সহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় পিচ রাস্তায় ছোটবড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সেখান দিয়ে যাতায়াত করলে পথচারী ও বিভিন্ন যানবাহনের চালক, আরোহীদের ভোগান্তি হচ্ছে। আরামবাগে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ২৪ মিলিমিটার। বৃহস্পতিবারের পর এদিনও কার্যত দিনভর নাগাড়ে বৃষ্টি হয়েছে আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে। ফলে এদিনও আরামবাগ শহরের বিভিন্ন নিচু এলাকায় জল জমে যায়। কিছু রাস্তাঘাটেও জল দাঁড়িয়ে পড়ে। আরামবাগে নির্মীয়মাণ কিছু দুর্গাপুজো মণ্ডপেও জল দাঁড়িয়ে যায়। এদিন আরামবাগ পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাঠপাড়া এলাকায় যন্ত্রের সাহায্যে জল বের করা হয়।