• পুলিসের বিরুদ্ধে তোলা আদায়ের অভিযোগ, বৃহত্তর আন্দোলনের পথে ময়নার মৎস্যজীবীরা
    বর্তমান | ২৩ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে নালিশ জানানোর পরও মাছের গাড়ি থেকে পুলিসের তোলা আদায় থামছে না সংশ্লিষ্ট পক্ষের অভিযোগ। উল্টে, পুলিসের পক্ষ নিয়ে ময়দানে নেমেছে শাসকদল তৃণমূল। অভিযোগকারী মৎস্যজীবীদের অনবরত হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তাতে অবশ্য দমে না গিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামছে ময়নার ফিস ফারমার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ও মৎস্য উন্নয়ন কমিটি। 

    সূত্রের খবর, স্ট্যান্ডিং কমিটিকে অভিযোগ জানানোর পর পূর্ব মেদিনীপুরে সাময়িক রেহাই মিলেছে। তবে, রাজ্যের অন্য জেলায় পুলিসকে সন্তুষ্ট না করলে মাছের গাড়ির চাকা গড়ছে না। প্রতিবাদে এবার ব্যাপক আন্দোলন নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফিস ফারমার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ও মৎস্য উন্নয়ন কমিটির কর্মকর্তারা শুক্রবার সকালে ময়নার অন্নপূর্ণা বাজারে এনিয়ে প্রস্তুতি মিটিং সারেন। সেখানে পুলিসের তোলাবাজির বিরুদ্ধে স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে সরব হওয়া পিণ্টু দাসও উপস্থিত ছিলেন। মিটিংয়ে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি হয়। ময়নার মাছ ও ব্যবসার সঙ্গে অনেকের রুজিরুটি জড়িয়ে রয়েছে। তাই এখানকার মাছকে কীভাবে জীবিত অবস্থায় গন্তব্যস্থলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, তানিয়েও রাজ্যের কাছে  পরিকল্পনা তৈরির দাবি জানানো হবে। গাড়িতে জল ও পাম্প থাকার অজুহাতে টাকা নেওয়া হয় বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। এই জুলুমবাজির হাত থেকে নিষ্কৃতীর উপায় বের করতেই আন্দোলন শুরু হবে।

    শুক্রবার অন্নপূর্ণা বাজারে আন্দোলনের প্রস্তুতি মিটিং হয়। সেখানে ময়না ফিস ফামার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক পিণ্টুবাবু, সভাপতি ঝণ্টুচরণ মিদ্যা, মৎস্য‌ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি পরেশনাথ দাস সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। গত ৬আগস্ট রাজ্য বিধানসভার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি ময়নায় এসেছিল। বিডিও অফিসে ওই কমিটির মৎস্য চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মুখোমুখি হয়। তখনই পিণ্টুবাবু বলেন, প্রতিদিন ময়নার ৫০০মাছের গাড়ি থেকে সাড়ে ১২লক্ষ টাকা তোলা দিতে হয় পুলিসকে। পূর্ব মেদিনীপুর সহ গোটা রাজ্যের বিভিন্ন থানার পুলিসকে তোলা দিতে গিয়ে তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ভিন রাজ্যেও একই সমস্যা। পুলিসের তোলাবাজির হাত থেকে তাঁরা অবিলম্বে নিষ্কৃতী চান। গোটা বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হতেই রাজ্যজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিস সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য এনিয়ে ডিএসপি(ডিইবি) শান্তব্রত চন্দকে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। গত ১৫আগস্ট ডিএসপি পিণ্টুবাবুকে নিজের অফিসে ডেকে পাঠান। সেখানে পিণ্টুবাবুর সঙ্গে আরও দু’টি সংগঠনের কর্মকর্তারাও হাজির হন। জীবিত অবস্থায় মাছ গন্তব্যস্থলে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে জল ও পাম্প রাখার অজুহাতে কীভাবে প্রতি মুহূর্তে পুলিসকে তোলা দিতে হয়, তা ডিএসপিকে জানান। 

    এদিকে, পুলিসের তোলাবাজির বিরুদ্ধে ময়নার মৎস্য ব্যবসায়ীরা গর্জে ওঠ঩তেই তাঁরা শাসক দলের কোপে পড়েছেন। তৃণমূল পরিচালিত ময়না পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ শাজাহান এনিয়েফিস ফার্মাস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেকড়া আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, পুলিসের বদনাম এবং রাজ্য সরকারের ইমেজ নষ্ট করতেই এমন অভিযোগ করা হয়েছে। এর কোনও বাস্তবতা নেই। একেবারে মিথ্যা অভিযোগ। মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীরা একাধিক সংগঠনে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। নিজেরা প্রচারে থাকতে এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।

    সংগঠনের নেতা পিণ্টুবাবু বলেন, স্ট্যান্ডিং কমিটির সামনে আমি পুলিসের তোলাবাজি নিয়ে সরব হয়েছিলাম। সেই সভায় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিও ছিলেন। তিনি সভায় আমার বক্তব্যের বিরোধিতা করেননি। এনিয়ে সরব হওয়া ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কেস দেওয়ার হুমকিও পেয়েছি। তাতে আমরা দমে যাইনি। এনিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। মাছের গাড়িতে জল ও পাম্প রাখা নিয়ে রাজ্য যাতে একটা নির্দিষ্ট গাইডলাইন বানিয়ে দেয় সেই লক্ষ্যে দপ্তরের বিভিন্ন অফিসে ডেপুটেশন দেওয়া হবে। কোনও হুমকি-ধমকির কাছে আমরা মাথা নত করছি না। এদিনের মিটিংয়ে সেটা চূড়ান্ত হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)