• ভোট-ফায়দায় মেট্রো উদ্বোধন মোদির! মমতার পরিকল্পনার কৃতিত্ব নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, আক্রমণ তৃণমূলের
    বর্তমান | ২৩ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রুবি মোড়, অর্থাৎ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় থেকে বেলেঘাটা স্টেশন পর্যন্ত মেট্রো পরিকাঠামো তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে এক বছরের উপর। আর ইস্ট-ওয়েস্টের অন্তর্গত শিয়ালদহ-এসপ্লানেড স্টেশনের মধ্যবর্তী অংশ চার মাস। ট্রায়াল রান হয়েছে বারবার। সাধারণ মানুষ দেখেছে। কিন্তু চড়তে পারেনি। কারণ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সময় দেননি। এবার সময় দিলেন তিনি। ঠিক ভোটের দামামা বেজে যাওয়ার পর। এর ফলে ইস্ট-ওয়েস্ট রুটে গত চার মাসে কত টাকার রাজস্ব ক্ষতি হল রেলের? আনুমানিক ৬ কোটি টাকার। কারণ, রেলই হিসেব কষে দেখেছে, হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত রুটে মাসে দেড় কোটি টাকা উপার্জন হবে তাদের। এখানেই তৃণমূল প্রশ্ন তুলছে, বেশি সুরাহা কার হল? বাংলার সাধারণ মানুষের? নাকি মোদি ব্রিগেড, তথা বিজেপির? কারণ, মানুষের সুবিধার কথা ভাবলে তিন মেট্রোপথের উদ্বোধন বহু আগেই সেরে ফেলা যেত। বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন কড়া নাড়া মাত্রই ‘ভোট পাখি’র আনাগোনা যে শুরু হয়ে গিয়েছে, সেই সমীকরণেই সিলমোহর দিচ্ছে বাংলার শাসক দল। শুক্রবার তার মহড়া সেরে গেলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এলেন, উদ্বোধন করলেন এবং কৃতিত্ব নিলেন। তৃণমূলের সাফ কথা—অথচ, এর নীল নকশা তৈরি করে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

    এদিন সকালেই এ বিষয়ে ‘স্মৃতি-তাড়িত’ হয়ে পড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, ‘ভারতের রেলমন্ত্রী হিসেবে কলকাতায় অনেকগুলি মেট্রো রেল করিডরের পরিকল্পনা করা ও অনুমোদনের সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। বলতে আমার দ্বিধা নেই যে, এই শহরের বিভিন্ন প্রান্তকে একটি মহানাগরিক মেট্রো গ্রিড-এ সংযুক্ত করার জন্য যাবতীয় কাজ—ব্লু-প্রিন্ট তৈরি, অর্থের ব্যবস্থা, সময়ে কাজ শুরু... সবেরই সৌভাগ্য হয়েছিল আমার।’ যদিও প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে সৌজন্যের খাতিরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামোল্লেখ করা হয়নি। এতেই ক্ষুব্ধ তৃণমূল। এদিন দলীয় মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘যে প্রকল্পগুলির উদ্বোধন করলেন, সেগুলি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভেবেছেন। মেট্রোরেলের সম্প্রসারণের স্বপ্ন যিনি দেখেছেন, সেই মমতার নাম অন্তত একবার উল্লেখ করা উচিত ছিল। উনি শুধু ভোটের আগে ফলকে নাম তুললেন।’

    সম্প্রসারণের আগে কলকাতা মেট্রো বলতে ছিল দমদম থেকে টালিগঞ্জ। ২০০৯ সালে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে কলকাতায় মেট্রো সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেছিলেন মমতা। ২০১১ সালের ১৫ জানুয়ারি বারাসতের সুভাষ ময়দান থেকে বারাসত-নোয়াপাড়া ভায়া বিমানবন্দর রুটের শিলান্যাস করেন তিনি। এই প্রকল্পের অংশই নোয়াপাড়া থেকে বিমানবন্দর মেট্রো পরিষেবা, যা এদিন প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন।

    মেট্রো নিয়ে এই অসৌজন্য এবং তরজার মাঝে অন্য কথা মনে করিয়ে দিয়েছে সিপিএমও। তাদের দাবি, বিজেপি সরকারে আসার অনেক আগের এই প্রকল্প—প্রথম ইউপিএ জমানার। তখন কেন্দ্রের সরকারে সমর্থন ছিল বামেদের। ২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো শিলান্যাসে কারা ছিলেন? প্রণব মুখোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সুভাষ চক্রবর্তী সহ বাম সাংসদরা। 
  • Link to this news (বর্তমান)