• ‘মোদী যত বার, তত বেশি আসন’, পাল্টা তোপ তৃণমূলের
    আনন্দবাজার | ২৩ আগস্ট ২০২৫
  • বিজেপির ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার আর দুর্নীতি, অপশাসন এবং নারী নির্যাতন সমার্থক বলে প্রধানমন্ত্রীর তোলা অভিযোগের পাল্টা তোপ দাগল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সঙ্গেই বাংলায় প্রধানমন্ত্রীর ‘আসল পরিবর্তনে’র আবেদনকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্যের শাসক দলের তরফে বলা হল, ‘মোদী যত বার আসবেন, রাজ্যে তৃণমূলের আসন আনুপাতিক হারে বাড়বে’!

    প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শুক্রবারের রাজ্য সফর কার্যত প্রাক্-নির্বাচনী সফর হয়ে উঠেছিল। সরকারি অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিজেপির দলীয় সভায় দাঁড়িয়ে সরাসরি এ রাজ্যে সরকার গঠনের সুযোগ চেয়েছেন তিনি। সেই লক্ষ্যে দুর্নীতি, অনুপ্রবেশ প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা নিয়ে তাঁদের দিকেই পাল্টা আঙুল তুলেছে রাজ্যের শাসক তৃণমূল। প্রধানমন্ত্রী শহর ছাড়ার আগেই তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘কাচের ঘরে বসে ঢিল ছুড়ছেন! বিজেপি যে ক’টা অভিযোগ তুলেছে, তার প্রতিটিতে তারা অভিযুক্ত।’’

    এ রাজ্যের সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারে দুর্নীতির অভিযোগকে অস্ত্র করেছে বিজেপি-সহ বিরোধীরা। আগামী ২০২৬ সালের ভোটের আগে এ দিন ফের এক বার সেই প্রসঙ্গ ফিরিয়েছেন মোদী। তারই জবাবে বিজেপির দিকে আঙুল তুলে কুণাল বলেন, ‘‘দুর্নীতিগ্রস্তদের পাশে বসিয়ে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলেছেন!’’ সেই সূত্রে ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে বিজেপির প্রকাশ করা নারদ-কাণ্ডের ভিডিয়োয় তৎকালীন তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ছবি দেখিয়ে কুণালের দাবি, ‘‘অসম, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতিগ্রস্তদেরই বিজেপি দলে নিয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের আওতায় থাকা ২৫ জন নেতা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর ‘ক্লিন চিট’ পেয়েছেন।’’

    মোদীর মুখে দুর্নীতির কথা শুনে সরব হয়েছে বাম ও কংগ্রেসও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর দাবি, “দুর্নীতির বিষয়ে তৃণমূল, বিজেপির কিছু বলার নেই। বলতে পারি আমরা। আজ পর্যন্ত বাম আমলের মন্ত্রীদের জামায় কালির দাগ লাগেনি। আর অনেক দিন জেলে কাটানো অমিত শাহ মন্ত্রী আছেন কী ভাবে? ৬০ হাজার কোটির দুর্নীতিতে অভিযুক্ত অজিত পওয়ারকে নিয়ে ধেই ধেই করে বিজেপি নাচছে কেন? বাংলার বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় জড়িত নেতাদের তো জেলে থাকতে হত!’’ সংবিধানের সংশোধনের তিনটি বিল প্রসঙ্গে সুজনের মন্তব্য, ‘‘ইডি-কে ব্যবহার করতে, খুশি মতো চলতে এবং ৩৫৬ ধারা জারি করা যাচ্ছে না, তা-ই এই সব। আসলে ইডি বা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাদের লাগিয়ে সরকার দখলের ঘৃণ্য পথ এটা।” আর প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের বক্তব্য, “বিজেপি জানে, ১৩০ নম্বর সংবিধান সংশোধনী হবে না। কিন্তু কান-খুশি করতে নানা কথা বলছে। বিজেপি-র ওয়াশিং মেশিনে যে দুর্নীতিগ্রস্তেরা যাবেন, তাঁরা সব সাফাই হয়ে যাবেন। আসলে ফ্যাসিবাদী সরকার ভোট-চুরি থেকে নজর ঘোরাতে, গণতন্ত্র হত্যা করতে, বিরোধী-শূন্য করতে চাইছে। এসআইআর সংক্রান্ত বিষয় ধামাচাপা দিয়ে মানুষের মন ঘোরাতে চাইছে।”

    রাজ্যে অনুপ্রবেশ নিয়েও তৃণমূলকে বিঁধেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার সংশোধন প্রক্রিয়া বা এসআইআর-কে কেন্দ্র করে আলোচনায় ফিরে আসা সেই অনুপ্রবেশ নিয়ে তরজায় পাল্টা আক্রমণ করেছেন তৃণমূলও। কুণাল বলেন, ‘‘অনুপ্রবেশের দায় কার? সীমান্ত পাহারা দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অধীনে থাকা বিএসএফ।’’ কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ভোটের আগে কেন এই নাটক শুরু করলেন?’’ এই প্রশ্নেই বিজেপি-শাসিত রাজ্যে এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করা এবং তাঁদের উপরে অত্যাচারের অভিযোগও তুলেছে তৃণমূল।

    বাংলার উন্নয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে ভাবনার কথা জানিয়েছেন, তা নিয়েও কটাক্ষ করেছে রাজ্যের শাসক দল। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজার মন্তব্য, ‘‘বাংলার মানুষ উপহার-দান চান না। শুধু ন্যায্য প্রাপ্যটুকু দিন। এ রাজ্য এক লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রেখেছে কেন্দ্র।’’ প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার বাংলা ভাষা সম্পর্কিত অংশ নিয়েও কটাক্ষ করেছেন শশী, কুণালেরা।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)