• মমতা ‘স্মৃতিমেদুর’, দিদিকে কৃতিত্ব তৃণমূলের, বিতর্কও
    আনন্দবাজার | ২৩ আগস্ট ২০২৫
  • কলকাতা মেট্রোর তিনটি সম্প্রসারিত পথের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু বাংলা তথা কলকাতার এই গুরুত্বপূর্ণ গণ-পরিবহণ ব্যবস্থা আদতে তাঁরই পরিকল্পনা বলে দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার পরেই বিধানসভা ভোটের আগে এই মেট্রো-পথকে ‘দিদির কৃতিত্ব, মোদীর নয়’ বলে সমাজমাধ্যমে প্রচারে নেমেছন তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্ব। এই আবহে মমতার বিরুদ্ধে ‘কৃতিত্ব চুরি’র অভিযোগ তুলে পাল্টা সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এর মধ্যেই প্রকল্পে তাদের অতীত-ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আসরে নেমেছে সিপিএম এবং কংগ্রেসও।

    প্রকল্প উদ্বোধনের আগেই রাজনীতির ছোঁয়া লেগেছিল। মেট্রো পথের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিল মেট্রো রেল। তবে সেখানে তিনি যাবেন না বলে আগেই জানিয়েছিলেন মমতা। এর পরে শুক্রবার মোদী কলকাতায় এসে মেট্রো-পথ উদ্বোধনের আগেই এই নিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন মমতা। কলকাতা মেট্রো নিয়ে তাঁর ‘স্মৃতিমেদুরতা’র কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বলেছেন, ‘দেশের রেলমন্ত্রী হিসেবে কলকাতায় একাধিক মেট্রো করিডরের পরিকল্পনা করা এবং অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমি পরিকল্পনা, অর্থের ব্যবস্থা, কাজ শুরু করেছিলাম।’ তাঁর সংযোজন, ‘এটাও নিশ্চিত করেছিলাম যে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত (‌‌যেমন, জোকা, গড়িয়া, বিমানবন্দর, সেক্টর ফাইভ ইত্যাদি) যাতে একে অপরের সঙ্গে আন্তঃনগর মেট্রো-নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত হয়।’ পাশাপাশি, রাজ্য সরকার এই প্রকল্পে কী কী ভাবে সহযোগিতা করেছে, তারও খতিয়ান দিয়েছেন মমতা।

    মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবির পরই ময়দানে নেমেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। সমাজমাধ্যমেই তিনি মমতার বিরুদ্ধে ‘কৃতিত্ব চুরির চেষ্টা’র অভিযোগ করে লিখেছেন, ‘আপনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে রাজ্যের অসহযোগিতার কারণে প্রকল্পগুলিতে বছরের পর বছর ধুলো জমেছে। জমি অধিগ্রহণের ব্যর্থতা, আপনার প্রশাসনের সরাসরি অসহযোগিতা প্রকল্পগুলির সময় মতো বাস্তবায়নকে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো-পথের শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেড অংশ রাজ্য ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতা যে দাবি করেছেন, তাকে উড়িয়ে দিয়ে শুভেন্দুর সংযোজন, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত ইউপিএ আমলে রেলমন্ত্রী হিসেবে যদি আপনি কয়েকটি পরিকল্পনা তৈরি করেও থাকেন, তা হলেও, ইউপিএ সরকার কুখ্যাত ছিল দেরির জন্য।’

    কলকাতায় মেট্রোর সম্প্রসারণের কৃতিত্ব নিয়ে তরজায় পিছিয়ে নেই সিপিএম-ও। সমাজমাধ্যমে ছবি দিয়ে তারা টেনে এনেছে ২০০৯-এ প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিলান্যাসের কথা। তাদের বক্তব্য, ‘৪৮৭৪.৫৮ কোটি টাকার ইস্ট-ওয়েস্ট কলকাতা মেট্রো করিডর ছিল বামফ্রন্ট সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সাফল্য। ২০০৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, রাজ্যের তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী, সাংসদ মহম্মদ সেলিম, সুধাংশু শীল, অমিতাভ নন্দী ও অন্যদের উপস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন।’ এই আবহে বিজেপির কৃতিত্ব-প্রচারের তীব্র সমালোচনা করে কেন্দ্রে তাঁদের আমলের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন রেল প্রতিমন্ত্রী তথা কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীও। তাঁর বক্তব্য, “এই সব প্রকল্প কংগ্রেসের আমলে। গঙ্গার নীচে মেট্রোর টানেল তৈরির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমি কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ করেছিল কংগ্রেস সরকারই।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)