নারকেলডাঙার বিজেপি নেতা অভিজিৎ সরকার খুনের মামলায় তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে শুনানিতে একাধিকবার বিচারকের অসন্তোষের মুখে পড়লেন সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার। শুক্রবার বিচার ভবনের বিশেষ আদালতে ওই মামলার শুনানি ছিল। এই মামলায় ১৫ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। অভিযুক্তেরা জেল হেফাজতে রয়েছেন। সম্প্রতি ওই মামলায় দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে শাসক দলের বিধায়ক পরেশ পাল, দুই পুরপ্রতিনিধি স্বপন সমাদ্দার, পাপিয়া ঘোষ, নারকেলডাঙা থানার তৎকালীন ওসি শুভজিৎ সেন-সহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই।
মিন্টা দাস নামে এক অভিযুক্তের পরিবর্তে আরতি মল্লিক নামে আরেকজনের নামে সিবিআইয়ের তরফে দু'বার সমন জারি করা হয়েছিল। আরতির আইনজীবী ইয়াসিন রহমান এ দিন ফের বিষয়টি নিয়ে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এর পরই বিচারক অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “তদন্তকারী অফিসার আদালতের সঙ্গে রসিকতা করছেন বলে মনে হচ্ছে।” ৪ সেপ্টেম্বর ওই বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য তদন্তকারী অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
ওই মামলায় জেল হেফাজতে থাকা অভিযুক্ত দুই ভাই সঞ্জয় সামন্ত এবং সমীর সামন্তকে জামিন দেওয়ার আর্জি জানান তাঁদের আইনজীবী। তিনি বলেন, “দুই অভিযুক্তের মা অসুস্থ। তাই মানবিকতার খাতিরে দু’জনকে জামিন দেওয়া হোক।” তিনি আরও বলেন, “জেলে টিআই প্যারেডে দু’জনকে শনাক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই টিআই প্যারেডের রিপোর্ট সিবিআইয়ের তরফে আমাদের দেওয়া হয়নি।” এর পরেই বিচারক ফের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “টিআই প্যারেডের রিপোর্টের কপি কেন দেওয়া হয়নি? এটা কী হচ্ছে?” বিচারক মামলার তদন্তকারী অফিসারের উদ্দেশে বলেন, “কী করছেন আপনি? সিবিআই দেশের অন্যতম সেরা তদন্তকারী সংস্থা। সেই তদন্তকারী সংস্থার অফিসারের আইন সম্বন্ধে অজ্ঞতা প্রকাশ পাচ্ছে। আমি জানি না, উনি (সঞ্জয় এবং সমীরের আইনজীবী) সত্যি বলছেন নাকি মিথ্যা বলছেন। কিন্তু উনি সত্য বললে আপনাকে আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে।”
এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন বেলেঘাটার বিধায়ক পরেশ পাল, কাউন্সিলর স্বপন সমাদ্দার এবং পাপিয়া ঘোষ। বৃহস্পতিবার তিনজনের আগাম জামিন মঞ্জুর করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এ দিন কলকাতার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তাঁরা এক লক্ষ টাকা করে ব্যক্তিগত বন্ড জমা দিয়েছেন। ওই মামলায় জেল হেফাজতে রয়েছেন শুভজিৎ সেন। কলকাতা হাইকোর্টের তাঁর আগাম জামিনের শুনানি বিচারাধীন। এ দিন ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে তাঁকে জেল থেকে আদালতে হাজির করা হয়। ওই মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্ত নারকেলডাঙা থানার তৎকালীন তদন্তকারী অফিসার রত্না সরকার এবং হোমগার্ড দীপঙ্কর দেবনাথ আদালতে হাজির ছিলেন। ওই মামলায় কাজল দাস নামে এক অভিযুক্ত জামিনে রয়েছেন। জামিনের শর্ত ভাঙা এবং সাক্ষীদের ভয় দেখানোর অভিযোগ তুলে নিহত অভিজিৎ সরকারের ভাই বিশ্বজিতের আইনজীবী কাজলের জামিন খারিজ করার আর্জি জানান। মামলার পরবর্তী শুনানি ৪ সেপ্টেম্বর।