• মেট্রো এল পায়ের তলায়, কিন্তু মাথার উপরে ছাদটা কবে? প্রশ্ন বাসিন্দাদের
    এই সময় | ২৩ আগস্ট ২০২৫
  • দেবাশিস দাস

    মেট্রোপথে হাওড়া–শিয়ালদহ জুড়ে যাওয়ার দিনেই বৌবাজারের রাস্তায় থালা বাজিয়ে প্রতিবাদে নামলেন এই প্রকল্পের জন্য নিজেদের মাথার ছাদ হারানো কয়েকশো মানুষ। সুড়ঙ্গ কাটতে গিয়ে মাটি ধসে দুর্গা পিতুরি লেন, মদন দত্ত লেন, গৌর দে লেন ও স্যাকরাপাড়া লেনের ১৪টি বাড়ি ভেঙে পড়ে এবং ৭৪টি বাড়ি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘরছাড়া হয়েছিলেন ৬৭৪ জন। কয়েক বছর পেরিয়ে বহুকাঙ্খিত রুটটি চালুর দিনেও চরম অসহায় অবস্থায় সেই মানুষগুলি। শুক্রবার তাই কলকাতা মেট্রো কতৃর্পক্ষের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে পথে নেমেছিলেন তাঁরা।

    স্যাকরাপাড়া লেনের বাসিন্দা দ্বারিক দত্তের বাড়ি ভাঙা পড়েনি এই কর্মকাণ্ডে। কিন্তু তাঁর আগের বাড়ি পর্যন্ত পাড়ার বেশিরভাগটাই কার্যত নিশ্চিহ্ন। এ দিন বিক্ষোভে পা মেলানো দ্বারিকের কথায়, ‘গোটা পাড়াটা ধ্বংস করে দিয়ে এখন সাফল্যের উদযাপন করা হচ্ছে। এটা কল্পনাতীত।’ এখনও নিজের পাড়া দুর্গা পিতুরি লেনে ফিরতে পারেননি কিশোর বড়াল। তিনি বলছেন, ‘বাড়ি তৈরির ডেডলাইন ক্রমশ পিছোচ্ছে। এখন শুনছি আগামী বছর নাকি হয়ে যাবে। কিন্তু মেট্রো কতৃর্পক্ষকে যে ভরসা করব, এমন কোনও কারণ এখনও পাইনি।’

    শুক্রবার বৌবাজারের ওই বিক্ষোভ শুরু হতে ঘরহারাদের দুরবস্থা দেখাতে কলকাতা পুরসভা থেকে মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যেতে যান ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার বিশ্বরূপ দে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ গিয়ে সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন মেয়র। বিক্ষোভে হাজির স্যাকরাপাড়া লেনের আশিস সেনের বক্তব্য, ‘মেয়রের কাছে আমাদের দাবি, নির্দিষ্ট ভাবে করে ঘর ফেরত পাব, তা জানানো হোক। সেই বাড়িও যে ভবিষ্যতে ধসে যাবে না, তার গ্যারান্টি কাউকে না কাউকে দিতে হবে।’

    তার আগে এ দিন পুরসভার মাসিক অধিবেশনে হাতে কালো ব্যান্ড পরে এসেছিলেন বিশ্বরূপ। তাঁর কথায়, ‘আমার ওয়ার্ডে ৫৩টি বাড়িতে ধস–ফাটলে ঘরছাড়া হয়েছিল ৩০০ পরিবার। তাঁরা এখনও অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সগর্বে মেট্রো সম্প্রসারণের উদ্বোধন করছেন। এটা তারই প্রতিবাদ।’

    বিশ্বরূপ এই ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জন্য একটি বিশেষ মনিটরিং সেল গড়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন পুরসভাকে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান, এখনও পর্যন্ত বৌবাজার থেকে ২৩টি বাড়ির নকশা জমা পড়েছে। কেএমআরসিএল–কে পুরসভার প্রস্তাব, বাড়িগুলো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারদের তত্বাবধানে তৈরি হোক। দশ বছরের জন্য নতুন বাড়ির গ্যারান্টি নিক কেএমআরসিএল। কিন্তু সেই প্রস্তাবে এখনও সাড়া মেলেনি, দাবি মেয়রের।

  • Link to this news (এই সময়)