• ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী , কিন্তু এই বন্দর দিয়ে আজও শুরু হলো না পণ্য পরিবহণ...
    আজকাল | ২৩ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে জলপথ বাণিজ্য আরও সুগম করার লক্ষ্য নিয়ে প্রায় দেড় বছর আগে মুর্শিদাবাদের লালগোলা ব্লকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করা হয়েছিল একটি নদী বন্দরের। মুর্শিদাবাদ জেলায় এসে কেন্দ্রের জাহাজ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর লালগোলার ময়া থেকে বাংলাদেশের সুলতানগঞ্জ পর্যন্ত পদ্মা নদী বক্ষে পণ্য পরিবহন এবং বাণিজ্যের আনুষ্ঠানিক সূচনাও করেছিলেন। তবে অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় সরকার সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে পড়ায় ওই নদী বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বর্তমানে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে রয়েছে। কবে এই বাণিজ্য চালু হতে পারে সেই সম্পর্কে কারোরই কোনও ধারণা নেই। ফলে পড়ে থেকে এক প্রকার নষ্ট হচ্ছে ওই নদী বন্দরের যাবতীয় পরিকাঠামো। 

    জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, জাতীয় জনপথ নম্বর ৫ এবং ৬-এর মাধ্যমে সংযুক্ত হয়েছে ভারতের ময়া এবং বাংলাদেশের সুলতানগঞ্জ নদী বন্দর। সূত্রের খবর, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের সুলতানগঞ্জ এবং গোদাগাড়ীর সঙ্গে লালগোলার ময়া এবং লালগোলা ঘাটের মধ্যে একটি বাণিজ্যিক জলপথ চালু ছিল। এই জলপথ ব্যবহার করে ভারত এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে বিভিন্ন রকমের পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হত। যদিও পরবর্তীকালে বিভিন্ন কারণে প্রায় ৬০ বছর এই বাণিজ্য পথ বন্ধ হয়ে ছিল। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন পাওয়ার পর লালগোলার ময়াতে দু'টি বেসরকারি কোম্পানি প্রায় ১০০ বিঘা জায়গার উপর দু'টি নদী বন্দর তৈরি করে। বেসরকারি কোম্পানিগুলি বহু কোটি টাকা ব্যয় করে ওই বন্দরে মালপত্র ওঠানো-নামানো এবং পণ্য পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি করেছিল।

    জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, বাংলাদেশর রূপপুরে একটি প্রকল্পের জন্য বিপুল পরিমাণ বালি এবং পাথরের চাহিদা রয়েছে। এই বালি এবং পাথর কলকাতা বন্দর হয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার কথা ছিল। লালগোলার ময়া থেকে বাংলাদেশের সুলতানগঞ্জ ঘাটের দূরত্ব নদীপথে মাত্র ১৭ কিলোমিটার। সেই সময় স্থির হয়েছিল ঝাড়খন্ড থেকে উত্তোলিত পাথর নতুন এই নৌ পথেই বাংলাদেশে যাবে। কেন্দ্রীয় সরকার সেই সময় জানিয়েছিল ময়া নদী বন্দর পুরোদমে কাজ শুরু করলে বছরে প্রায় ২.৬ মিলিয়ন টন মাল জলপথে মুর্শিদাবাদ থেকে সরাসরি বাংলাদেশে পৌঁছে যাবে। ময়া নদীবন্দর উদ্বোধন করে কেন্দ্রের জাহাজ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর দাবি করেছিলেন, হলদিয়া থেকে  বারাণসী পর্যন্ত অন্তর্দেশীয় এই ১ নম্বর জলপথ বরাবর পরিকাঠামো উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এই জলপথে তাঁরা ৬২ টি জেটি ,রোরো এবং রোপ্যাক তৈরি করবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। 

    লালগোলা ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সদস্য মহম্মদ মোতাহার হোসেন রিপন বলেন,' নদী বন্দর চালু হয়ে গেলে এলাকার প্রচুর মানুষ গ্রামেই কাজ পাবেন এই আশা নিয়ে ময়া গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দা এই প্রকল্পের জন্য তাদের জমি লিজে দিয়েছিলেন এবং রাজ্য সরকার সব রকম সাহায্য করেছিল। নদী বন্দরের পরিকাঠামো তৈরির পর সেখানে বর্তমানে সিআইএসএফ এবং কাস্টমসের তরফ থেকে পাহারা থাকলেও বাণিজ্য না হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলি ব্যাপক  আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং অনেক জমিদাতা লিজ দেওয়া জমির টাকা পাচ্ছেন না। গোটা প্রকল্প এলাকা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা থাকায় জমি কী অবস্থায় পরে রয়েছে কেউ জানেন না। উদ্বোধনের পর কেউ নদী বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পণ্য যেতে বা সে দেশ থেকে পণ্য আসতেও দেখেনি।' তিনি বলেন,' এই নদী বন্দর চালু হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ময়া নদী বন্দর আসলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের 'অশ্ব ডিম্ব' প্রসব ছিল। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি রাখছি তারা যেন দ্রুত এই বন্দর চালু করে এলাকার বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন।অন্যদিকে বিজেপির জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুবল দাস দাবি করেন, 'বাংলাদেশের রাজনৈতিক  পরিস্থিতির কারণে ওই বন্দর  দিয়ে বাণিজ্য শুরু করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও কিছু বাধ্যবাধকতার কারণে ওই নদী পথ ব্যবহার করে বাণিজ্য করা সম্ভব হচ্ছে না।  তবে আমরা আশাবাদী আগামীদিনে ময়া নদীপথ ব্যবহার করে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য করা সম্ভব হবে। '
  • Link to this news (আজকাল)