• লুটপাটের উদ্দেশে নিউ গড়িয়ায় বৃদ্ধা খুন, পুলিশের জালে আয়া ও তার সঙ্গী
    প্রতিদিন | ২৩ আগস্ট ২০২৫
  • অর্ণব আইচ: নিউ গড়িয়ার অভিজাত আবাসনে বৃদ্ধা খুনের কিনারা। আয়া আশালতা সর্দার এবং তার সঙ্গীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রায়দিঘি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের। পুলিশ সূত্রে খবর, গয়নাগাটি লুটের পর বৃদ্ধাকে খুন করা হয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে লুট হয়ে যাওয়া গয়নাগাটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

    নিউ গড়িয়ার সমবায় আবাসনের এফ ব্লকে একটি দোতলা বাড়িতে থাকতেন বৃদ্ধা বিজয়া দাস ও তাঁর স্বামী প্রশান্ত দাস। কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থায় কাজ করতেন প্রশান্ত দাস। প্রশান্ত-বিজয়ার ছেলে থাকেন জার্মানিতে। মেয়ে থাকেন মুম্বইয়ে। মধুমিতা বাড়ির বহুদিনের পরিচারিকা। তবে করোনার পর থেকে মধুমিতা শুধু বাইরের কাজ করেন। শুক্রবার ভোরে সাফাইয়ের কাজ করতে আসেন পরিচারিকা মধুমিতা। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকেই আঁতকে ওঠেন। দেখেন সিঁড়ির কাছে মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বাড়ির বৃদ্ধা গৃহিনী বিজয়া দাস (৭৯)। তাঁর মুখ, হাত-পা বাঁধা। মাথা ও মুখে আঘাতের চিহ্ন। মেঝেয় চাপ চাপ রক্ত। খবর পেয়ে পুলিশ এসে উদ্ধার করে বৃদ্ধার দেহ। ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা পুলিশকে জানিয়েছেন, গলা টিপে শ্বাসরোধ ও তাঁর মাথা এবং মুখে আঘাত করে বৃদ্ধাকে খুন করা হয়।

    তবে বাড়ির গৃহিনীকে খুন করলেও কর্তা প্রশান্ত দাসকে রেহাই দেয় খুনি। সদ‌্য অস্ত্রোপচার হয়েছে বৃদ্ধ প্রশান্ত দাসের। তাঁকে একতলার একটি ঘরের খাটের তলায় ঢুকিয়ে দেয় খুনিরা। তিনি আর উঠতে পারেননি। পরিচারিকা মধুমিতা পাশেই এক বৃদ্ধাশ্রমের মহিলা কর্মীকে নিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে বৃদ্ধার দেহ দেখতে পান। সেই সময় তাঁরা গোঙানির শব্দ শুনতে পান। দেখেন, একতলারই একটি ঘরের খাটের তলা থেকে বের হয়ে রয়েছে বৃদ্ধ প্রশান্ত দাসের মাথা। মাথার তলায় রয়েছে বালিশ। দীর্ঘসময়ের জন‌্য তিনি কোনও খাবার, জল বা ওষুধ পাননি। এক আত্মীয় তাঁকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। যদিও বৃদ্ধ প্রশান্তবাবু আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। হোম ডেলিভারি থেকে খাবার নিতেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। ডিনার টেবিলে পড়েই ছিল খাবারের কৌটো।

    তদন্তে নেমে পুলিশ বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। তাতে দেখা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার পরিচারিকা মধুমিতা ভোর ৫টা ১৭ মিনিট থেকে ৫টা ৪২ পর্যন্ত কাজ করে চলে যান। প্রায় সাত মাস আগে আয়া সেন্টার থেকে এক আয়াকে নিয়োগ করেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। যেহেতু কিছুদিন আগেই বৃদ্ধ প্রশান্ত দাসের অস্ত্রোপচার হয়েছে, তাই মূলত তাঁকে দেখভালই করতেন ওই আয়া। সাত দিন আগে তিনি ছুটি নেন। তার বদলে ১৭ আগস্ট অভিযুক্ত ওই আয়া কাজে যোগ দেয়। সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত কাজের বদলে ৪০০ টাকা পেত।

    সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার তাকে বাড়িতে আসতে দেখা যায়। কিন্তু তারপর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় সিসিটিভি। এমনকী, বাড়ির মেন সুইচও বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশের ধারণা, মা-বাবার চিকিৎসার জন‌্য পাঠানো টাকা বাড়িতে রেখেছিলেন দম্পতি। তা জানতে পেরেই আয়া তার সঙ্গীদের নিয়ে হানা দেয়। দুপুরের আগেই হোম ডেলিভারি থেকে খাবার এসেছিল। ওই আয়াই সেটি নিয়ে নেয়। যাতে কেউ কিছু বুঝতে না পারে, তাই কাউকে ভিতরেও ঢুকতে দেয়নি। খুন ও লুটপাটের পর সন্ধের মধ্যেই বাড়ির পিছনের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে উধাও হয়ে যায় অভিযুক্ত আয়া। কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ অভিযুক্ত আয়া ও তার সঙ্গীকে গ্রেপ্তার করে।
  • Link to this news (প্রতিদিন)