• IIT খড়্গপুরের নির্দেশকের উদ্যোগে স্বমহিমায় উজ্জ্বল ‘ব্রাত্য’ বাংলা
    এই সময় | ২৩ আগস্ট ২০২৫
  • সুমন ঘোষ খড়্গপুর

    বাংলা-বাঙালি-বাংলাদেশ- এই তাহস্পর্শে উত্তাল তামাম দেশ। এই দ্বেষাদ্বেষির আবহে চেনা ছকের বাইরে হাঁটছে খড়্গপুর আইআইটি। এতদিন যেখানে কদর তো দূরের কথা, বাংলা ভাষা 'ব্রাত্য' ছিল বললেও অত্যুক্তি হয় না। এ বার সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রাজভাষা বিভাগে হিন্দির সঙ্গেই সমাদৃত হবে বাংলা ভাষাও। ফলে ইংরেজি, হিন্দির পাশাপাশি যাবতীয় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে বাংলাতেও।

    গত বেশ কিছুদিন থেকে বাংলায় কথা বলার 'অপরাধে' ভিনরাজ্যে হেনস্থা হতে হয়েছে বহু পরিযায়ী শ্রমিককে। বাংলা ও বাঙালির উপরে এমন বেনজির আক্রমণের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এ বার কেন্দ্রের অধীনে থাকা বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলাকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়ার ঘটনাকে অনেকেই অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন।

    এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে খড়্গপুর আইআইটি-র ডিরেক্টর সুমন চক্রবর্তী জানান, আইআইটির চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে বাঙালি। সেই বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞা করার অর্থ পিছিয়ে পড়া। তাছাড়া জাতীয় শিক্ষানীতিতেও তিনটি ভাষার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে অবশ্যই একটি আঞ্চলিক ভাষা। সুমনের সংযোজন, 'আমাদের আঞ্চলিক ভাষা তো বাংলা। তা হলে কেন ইংরেজি, হিন্দির পাশাপাশি বাংলা ভাষার ব্যবহার হবে না? আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নাম-ফলকের পাশাপাশি লেটার-হেডেও অন্য ভাষার সঙ্গে বাংলাও রাখা হবে। রাজভাষা বিভাগেও বাংলা চালু হবে। যাতে অন্য ভাষার সঙ্গে বাংলাতেও বিজ্ঞপ্তি জারি করা যায়।'

    চলতি বছরের জানুয়ারিতে। আইআইটি-র ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দিয়েছেন সুমন। আইআইটি চত্বরে প্রথম বাংলা ভাষা নজরে পড়ে তাঁর নাম-ফলকে। যেখানে লেখা রয়েছে- সুমন চক্রবর্তী, নির্দেশক। এ বার তাঁর লেটার-হেডেও দেখা যাবে বাংলা। তবে এই কাজটি কিন্তু সহজ ছিল না। সূত্রের খবর, আইআইটি-র অনেকেই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। কিন্তু সুমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা-সহ নানা যুক্তি দিয়ে সেই আপত্তি খন্ডন করেন। এমনকী, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০-এর কথা উল্লেখ করেও বাকিদের নিরস্ত করেন।

    সুমনের যুক্তি, অনেক ক্ষেত্রে এমন কিছু বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় যেগুলো সাধারণ মানুষের জন্য। ইংরেজি ও হিন্দিতে লেখা সেই বিজ্ঞপ্তি অনেকেই বুঝতে পারেন না। তা হলে সেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে লাভ কী? আইআইটি-র এক অধ্যাপক জানাচ্ছেন, খড়্গপুর আইআইটি-র সঙ্গে গ্রামীণ এলাকার বহু সাধারণ মানুষের সম্পর্ক রয়েছে কাজের প্রয়োজনেই। কর্মশালায় গ্রামের সাধারণ চাষিরাও যোগ দেন। তাঁদেরও ইংরেজি ও হিন্দিতে লেখা আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়। কিন্তু তাঁদের সকলেই কি তা বুঝতে পারেন। যাঁদের উদ্দেশে বার্তা তাঁরাই যদি না বুঝতে পারেন তা হলে আসল উদ্দেশ্যই তো ব্যর্থ হয়ে যায়। একই ভাবে

    আইআইটি ক্যাম্পাসে বা গেটে সাধারণ মানুষের উদ্দেশে যদি কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়, সে ক্ষেত্রেও তা বাংলায় লেখা জরুরি। শুধু ইংরেজি বা হিন্দিতে থাকলে তা সবার বোধগম্য না-ও হতে পারে। এ ছাড়াও আইআইটি-র অনেক পড়ুয়াও তো বাঙালি। তাঁরাও নিজের ভাষায় বিজ্ঞপ্তি বা নির্দেশিকা দেখলে খুশিই হবেন। এই সব কারণে এ বার রাজভাষা বিভাগে হিন্দির পাশাপাশি বাংলা ভাষায় পারদর্শী কোনও ব্যক্তিকেও যুক্ত করার পথেও এগোচ্ছে আইআইটি। ডিরেক্টর বলেন, 'ওই ব্যক্তি প্রয়োজনীয় বিজ্ঞপ্তি বা নির্দেশিকা বাংলায় লিখে দেবেন। তারপরে তা সংশ্লিষ্ট জায়গায় পাঠানো হবে।'

  • Link to this news (এই সময়)