দিনে ৩ কেজি চালের ভাত, এক একবারে লাগে ১৫টা রুটি, ১৩০ কেজি ওজনের কিশোরের খোরাকি জোগাতে হিমশিম দিনমজুর বাবা...
আজকাল | ২৩ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১৬ বছর বয়সেই ছেলের ওজন ছাড়িয়েছে ১৩০ কেজি। আর তার খাবার জোগাতেই হিমশিম খাচ্ছেন বাবা ও মা। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি থানার অন্তর্গত কাবিলপুর পঞ্চায়েতের মথুরাপুর গ্রাম। সেখানেই দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে বাস করেন পেশায় কাঠকলের শ্রমিক মুনশাদ আলি।
তবে ছেলের জন্য পাঁচবেলার খাওয়ার জোগানোই এখন সব থেকে বড় চিন্তা মুনশাদের। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই তার ওজন ১৩০ কেজি ছাড়িয়ে গিয়েছে। বর্তমানে কাবিলপুর হাই স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র ওই কিশোর পাঁচবেলা যে পরিমান খাবার খায় তা দেখে গ্রামের অনেক লোক আড়ালে-আবডালে ওই কিশোরকে 'আধমনি কৈলাশ' বলেও ডাকেন।
মুনশাদ জানিয়েছেন, তাঁর তিন ছেলে-মেয়ে। বড় ছেলে এবং মেয়ে স্বাভাবিক হলেও ওজনে ছোটবেলা থেকেই কিছুটা অস্বাভাবিকত্ব ছিল তাঁর ছোট ছেলের। বয়স যত বেড়েছে ততই অস্বাভাবিকভাবে ওজন বেড়েছে।
আর্থিক কারণে মুনশাদের পক্ষে তাঁর ছোট ছেলেকে বড় কোনও ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য হয়নি। গ্রামে হাতের কাছে যে সমস্ত ডাক্তার পেয়েছেন তাঁদের কাছে দু-একবার তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। খাওয়া কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম এবং হাঁটার কথা বলেই এই কিশোরের রোগ নিরাময়ের জন্য তার বাবা-মাকে পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তাররা। কিন্তু বাবার দাবি, ডাক্তারের পরামর্শ মেনে সবকিছু করলেও ওজন কমার পরিবর্তে দিন দিন তা বেড়ে চলেছে।
মুনশাদ আলি বলেন,' আমার বড় ছেলে গ্রাজুয়েশন করার পর বাড়িতেই বসে রয়েছে। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আমি গ্রামের একটি কাঠমিলে দিনমজুরের কাজ করি। এই উপার্জনের টাকায় ছেলের জন্য খাবার জোগাড় করতে গিয়ে আমি হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি।'
তিনি বলেন,' আমার ছোট ছেলের জন্য প্রত্যেকদিন আড়াই থেকে তিন কেজি চালের ভাত রান্না করতে হয়। এর পাশাপাশি তরকারি, ডাল ,মাছ, মাংস ,ডিম প্রায় সবকিছুই রোজ তাকে দিতে হয়। রুটি খেতে খুব একটা ভালো না বাসলেও একবারে ১০-১৫টা রুটি খেয়ে ফেলতে পারে সে।'
ছেলের প্রিয় খাবার কী এই প্রশ্ন মুনশাদের কাছে রাখা হলে তিনি বলেন,' আমার ছেলে বিরিয়ানি, ফ্রাইড রাইস খেতে ভালোবাসে। তবে অন্য কোনও খাবার দিলেও সে ফেলে দেয় না। হাতের কাছে যা পায় সেটাই খেয়ে নেয়।'
কোনও অনুষ্ঠান বাড়িতে গেলে জিশানের জন্য কি আলাদা করে কোনও ব্যবস্থা করতে হয় ?সেই প্রশ্নের জবাবে মুনশাদ বলেন,' অনুষ্ঠান বাড়িতে সকলে যা খায় আমার ছেলেও তা খায়। তবে হয়তো বয়স অনুপাতে অন্যদের থেকে একটু বেশিই খাবার খায় আমার ছেলে।' তবে যেভাবে ছেলের ওজন ও খোরাকি বছরের পর বছর বেড়ে চলেছে তাতে চিন্তিত তার পরিবারের সদস্যরা। মুনশাদের স্ত্রী পিয়ারুন বিবি বলেন,' বছরখানেক আগে দুর্গাপুরের একটি হাসপাতালে আমার হার্টের বাইপাস সার্জারি হয়েছে। অসুস্থ শরীর নিয়েই আমাকে ছেলের জন্য প্রত্যেকদিন রান্না করতে হয়। মাঝেমধ্যে আমার স্বামীও রান্নার কাজে হাত লাগায়। তবে সময়মতো খাবার না পেলেই মাথা গরম হয়ে ওঠে ছোট ছেলের। তখন বাবা -মাকে খারাপ কথাও সে বলে ফেলে।'
মুনশাদ বলেন,' ছেলের ওজন যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে দ্রুত তার চিকিৎসা প্রয়োজন আমি জানি। ছেলের চিকিৎসার সামর্থ্য না থাকায় আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে আবেদন জানিয়েছি চিকিৎসার জন্য। '
মুনশাদের এক প্রতিবেশী এবং সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য রাজা বলেন,'স্থুলকায় চেহারার জন্য ছোট থেকেই ওই ছেলেটি গ্রামে বেশ পরিচিত। গত কয়েকদিন ধরে ওকে দেখছি নিজেই ঘুগনি তৈরি করছে, খাচ্ছে এবং বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে তা বিক্রিও করছে।'
ওই প্রতিবেশী জানান,' চেহারার জন্য গ্রামের ছোট ছোট বাচ্চারা ওই কিশোরকে নিয়ে যথেষ্ট আমোদ করে। গ্রামে কারও বাড়িতে কোনও অনুষ্ঠান হলে সেখানেই তার দেখা পাওয়া যায়। সকলের সঙ্গে আমোদ করার পর সেখানে তার ভালো মন্দ খাবারও জুটে যায়।'
এই অস্বাভাবিক খাবারের অভ্যাস ও ওজনের কারণ নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ কালিদাস বিশ্বাস বলেন, 'যতটুকু শুনলাম সেই অনুযায়ী ওই কিশোরের তিন রকমের পরীক্ষা প্রয়োজন। একটি হল সাইকোলজিক্যাল বা মানসিক, দ্বিতীয়টি এন্ডোক্রিনোলজি বা হরমোন এবং আরেকটি হল গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিক্যাল বা তার পাকস্থলি, লিভার বা এই সংক্রান্ত অন্যান্য জিনিসের। সমস্ত পরীক্ষার ফলাফল দেখেই বোঝা যাবে এর পিছনে কী কারণ।'