• অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলে ইলিশ উৎসব! ইলিশ ভাপা-ভাজা চেটেপুটে খেল পড়ুয়ারা...
    ২৪ ঘন্টা | ২৩ আগস্ট ২০২৫
  • নকিব উদ্দিন গাজী: জেলার সেরা প্রাথমিক স্কুল ফলতা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর সেখানেই পড়ুয়াদের জন্য ইলিশ উৎসব (Hilsha Festival)। পড়ুয়াদের পাতে পাতে পড়ল ইলিশ ভাপা, ইলিশ ভাজা (Hilsha)। 

    দুর্মূল্যের বাজারে ইলিশ মানেই স্বপ্নের মতো খাবার। বড়-ছোট সব ধরনের ইলিশ মিললেও পরিমাণে কম। তাই দামে ছ্যাঁকা খেতে হচ্ছে সাধারণ বাঙালিকে। কিন্তু সেই রুপোলি শস্যের স্বাদের আনন্দই মিলল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের। ভালোবাসা দিয়ে শিক্ষকরা সাজালেন এক অনন্য ইলিশ উৎসব। পড়ুয়াদের সবাইকে দেওয়া হল ইলিশ ভাপা, ইলিশ ভাজা আর ইলিশের তেল।

    ফলতা ব্লকের শ্যামসুন্দরপুর, রাজারামপুর, জালালপুর, তারাগঞ্জ, জাফরপুর ও উত্তর বাসুল্লাট এলাকার মৎস্যজীবী ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলের প্রায় ৪২৫ জন ছাত্রছাত্রী পড়ে এই বিদ্যালয়ে। প্রায় ৯০ বছরের পুরনো এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক তিলক নস্কর যুক্ত হন ১৯৯৯ সালে। বর্তমানে তাঁর শিক্ষকতা জীবনের ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। তখন ছাত্র সংখ্যা ছিল মাত্র ৯৯। বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন ৭ জন।

    বিদ্যালয়ের জমি দান করেছিলেন প্রভাকর মল্লিক, মোট ২২ শতক জমি। দীর্ঘ ইতিহাস বিজড়িত এই বিদ্যালয়ের কৃতিত্বও গর্বের। ২০১৫ সালে জেলার সেরা স্কুল হিসেবে স্বীকৃতি পায় এই স্কুল। ২০১৭ সালে বিদ্যালয় নিজস্ব কৃতিত্ব ও শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য পায় যামিনী রায় পুরস্কার। পরে ২০২২ সালে প্রধান শিক্ষক তিলক নস্কর পান শিক্ষারত্ন পুরস্কার।

    স্কুলের শিক্ষক জয়দেব নস্কর বলেন, “ছাত্র-ছাত্রীদের আমরা সন্তানের মতো মনে করি। সেভাবেই তাদের শিক্ষাদান করি। এমনকি বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগও নেওয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে এবারের ইলিশ উৎসব।” এক ছাত্রীর মা পূজা সাউ বলেন, “বাজারে ইলিশের দাম অনেক বেশি। সব সময় ছেলেমেয়েদের সেই ইলিশ কিনে খাওয়াতে পারি না। তাই স্কুলের এমন উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই।”

    চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রেশমা পারভিন উচ্ছ্বাসের সঙ্গে জানায়, “স্কুলে ইলিশ উৎসবে ইলিশ রান্না হওয়ায় ভীষণ খুশি। প্রতিদিন মিড-ডে মিলে ডাল থাকে। কিন্তু আজ ইলিশ উৎসব হওয়াতে ডালের দিকে কারও নজর নেই।” বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সবিতা মিস্ত্রি বলেন, “ইলিশ মাছে প্রচুর কাঁটা থাকে। খুদে পড়ুয়াদের জন্য আমরা নিজেরাই কাঁটা ছাড়িয়ে পাতে পরিবেশন করি। সারা বছর বিভিন্ন সময় তাদের আবদার মতো রান্নার আয়োজন করা হয়। এবারের ইলিশ উৎসবও সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।”

    বিদ্যালয়ের আরেক ছাত্রী রূপসা প্রামাণিক জানায়, “বাড়িতে সেভাবে ইলিশ খাওয়া হয় না। তাই স্কুলের এই ইলিশ উৎসবে প্রথমবার ইলিশ ভাপা খেয়ে খুব ভালো লেগেছে।” ছাত্র-ছাত্রীদের একটাই কথা, বাড়িতে রোজ দিন ডাল-ভাত খেতে হয়, কিন্তু ইলিশ মাছ ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। স্কুলের এই ইলিশ উৎসবে চেটেপুটে ইলিশ খাওয়ার সুযোগ পেল তারা।

    বিদ্যালয়ের নানা কাজে নিয়মিত সহযোগিতা করে থাকে ব্লক প্রশাসন। ফলতা ব্লকের প্রায় দেড়শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ফলতা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন এক নজির হয়ে উঠেছে। বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক তিলক নস্কর জানিয়েছে, মিড-ডে মিলের একঘেয়েমি কাটাতে এবং ছাত্রছাত্রীদের আনন্দ দিতে এমন আয়োজন ভবিষ্যতেও করা হবে।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)