• ৩ দিন বাড়িতে রেকির পর নিউ গড়িয়ার বৃদ্ধাকে খুন! আয়াকে জেরায় মিলল বিস্ফোরক তথ্য
    প্রতিদিন | ২৩ আগস্ট ২০২৫
  • অর্ণব আইচ: তিনদিন ধরে গোটা বাড়ি ঘুরে রেকি। সিসি ক্যামেরার কানেকশন বিচ্ছিন্ন করে ঠান্ডা মাথায় নিউ গড়িয়ার অভিজাত আবাসনে বৃদ্ধাকে খুন। লুটপাটের পর মোবাইল সুইচড অফ করে গা ঢাকা। একের পর এক ডেরা বদল করেও লাভ হল না কিছুই। ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বৃদ্ধা খুনের কিনারা। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার আয়া আশালতা এবং তার প্রেমিক জালাল মীর। দু’জনকে দফায় দফায় জেরা করছে পুলিশ।

    ধৃত বছর ছত্রিশের আশালতা সর্দার ঢোলাহাটের বাসিন্দা। সে বিবাহিত। স্বামীর সঙ্গে তেমন বনিবনা ছিল না। বাড়ি বাড়ি আয়ার কাজ করে। যাতায়াতের পথে জালাল মীর নামে বছর একচল্লিশের এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ হয়। কথাবার্তা হত তাদের। মাত্র কয়েকদিনে বাড়ে ঘনিষ্ঠতা। প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তার ফলে স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে। জালালের সঙ্গে সংসার পাতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। নরেন্দ্রপুরে বাড়ি ভাড়া নেয়। সহজেই বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখত আশালতা ও জালাল। বৃদ্ধ দম্পতিরা ‘সফট টার্গেট’ ছিল তাদের। পরিকল্পনামাফিক তাই আয়া সেন্টারের মাধ্যমে নিউ গড়িয়ার অভিজাত আবাসনের নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ দম্পতির দেখভালের কাজ নেয় আশালতা। গত ১৭ আগস্ট কাজে যোগ দেয়। গোটা বাড়ি দিনতিনেক রেকি করে আশালতা। জানতে পারে, বৃদ্ধ দম্পতির ছেলে জার্মানিতে, মেয়ে মুম্বইতে থাকে। বাবা-মায়ের দেখভালের জন্য বাড়িতে নগদ টাকা মজুত রাখা রয়েছে, তা-ও জেনে যায় আশালতা। দেখে কোথায় টাকাপয়সা, গয়নাগাটি রাখা থাকে।

    তথ্য জোগাড়ের পরই মূল ‘অপারেশনে’ ঝাঁপিয়ে পড়ে আশালতা। আর সময় নষ্ট না করে বৃহস্পতিবারই খুন ও লুটপাট সারে। সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, ওইদিন আশালতাকে বাড়িতে আসতে দেখা যায়। তারপর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় সিসিটিভি। এমনকী, বাড়ির মেন সুইচও বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুপুরের আগেই হোম ডেলিভারি থেকে খাবার এসেছিল। ওই আয়াই সেটি নিয়ে নেয়। যাতে কেউ কিছু বুঝতে না পারে, তাই কাউকে ভিতরেও ঢুকতে দেয়নি। সম্ভবত দুপুরের আশেপাশে সময়ে সে বৃদ্ধাকে খুন করে। গয়নাগাটি, টাকাপয়সা এবং বৃদ্ধ দম্পতির দু’টি মোবাইল নিয়ে দরজা বন্ধ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে, নিউ গড়িয়া স্টেশনে আশালতার অপেক্ষায় ছিল জালাল। প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করে ঢোলাহাটে নিজের শ্বশুরবাড়িতে যায়। সুইচড অফ করে নিজের মোবাইল রেখে দেয়। এরপর রায়দিঘির কাঞ্চনদিঘিতে নিজের বাপের বাড়িতে যায়। সেখানে বসে বৃদ্ধ দম্পতির মোবাইল একবার অন করে। ঠিক সেই মুহূর্তে পুলিশ মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে ফেলে। তবে এক রাতের মধ্যে সে একাধিকবার জায়গা বদল করে। মথুরাপুর হয়ে নরেন্দ্রপুরের ভাড়াবাড়িতে গিয়ে গা ঢাকা দেয়।

    আশালতার খোঁজে আবার আয়া সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। ওই আয়া সেন্টারের মাধ্যমে কোথাও কাজে যোগ দেওয়ার আগে ফর্ম ফিলআপ করতে হয়। সেখানে নিজের নাম, ঠিকানার প্রমাণপত্রের পাশাপাশি পরিচিত দু’জনের বিস্তারিত তথ্য দিতে হয়। দু’জন আত্মীয়র নাম-ঠিকানা পান তদন্তকারীরা। এক গ্যাস সরবরাহকারীর তথ্য পাওয়া যায়। তার সঙ্গে কথা বলে আশালতার বাড়ির ঠিকানা জানতে পারে পুলিশ। সেই অনুযায়ী একের পর এক ঠিকানায় হানা দেয় পুলিশ। অবশেষে শনিবার সকালে আশালতা এবং তার পুরুষ সঙ্গী জালালকে গ্রেপ্তার করেন তদন্তকারীরা। তাদের কাছ থেকে লুটপাট হওয়া গয়নাগাটি এবং টাকাপয়সা বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
  • Link to this news (প্রতিদিন)