স্কুল চলাকালীন ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন অভিভাবকরা। স্কুলের ভিতরে একদিকে ক্লাস চলছে, অন্য দিকে মাইক, ধামসা ও মাদল বাজিয়ে চলছে সরকারি প্রকল্প। স্কুল চলাকালীন সপ্তাহের মাঝে কেন এ ভাবে সরকারি প্রকল্পের আয়োজন করা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। এ দিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার খাতড়া ব্লকের ধানাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চাকা নির্মলানন্দ হাইস্কুলে।
শুক্রবার ওই স্কুলে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ প্রকল্পের শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। ক্লাসরুম দখল করে যে ভাবে দিনভর মাইক বাজিয়ে শিবিরের কাজ চলল তাতে কার্যত লাটে উঠেছে সেই স্কুলের পঠনপাঠন। এ দিন ওই স্কুলে ১০৭, ১১৪ ও ১১২ নম্বর বুথ নিয়ে এই শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। স্থানীয় ব্লক প্রশাসন ওই স্কুলে সেই শিবিরের আয়োজন করেছিল। জানা গিয়েছে, স্কুলকে আগাম জানিয়ে এই শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল।
শিবিরে এলাকার বহু মানুষ নিজেদের সমস্যা নিয়ে সেখানে এসেছিলেন। সেখানে শিবির উপলক্ষ্যে মাইক ও ধামসা, মাদল বাজানো হয়। উৎসবের মেজাজে যখন সেই শিবির চলছে তখন সেই স্কুলের ক্লাসরুমে কোনও মতে ক্লাস করাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। অভিভাবকদের দাবি, এ ভাবে স্কুলের পঠনপাঠন ব্যাহত না করে কোনও ছুটির দিনে অথবা অন্যত্র কোথাও অনায়াসেই এই শিবিরের আয়োজন করা যেত।
তবে শিবিরের জন্য যে স্কুলে পড়ুয়াদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবকান্তি মহান্তি। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে স্কুল বন্ধ রাখার কোনও নোটিস ছিল না। প্রকল্পের জন্য কতগুলি রুম লাগবে শুধু সেটাই বলা হয়েছিল। সেই মতো একদিকে স্কুল চলছে, আর অন্য দিকে প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। সমস্যা যে হচ্ছে না, তা নয়। কারণ স্কুলের মধ্যে মাইকের আওয়াজের পাশাপাশি পড়াশোনা করাটা একটু সমস্যার। স্কুলে সরকারের তরফ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাই সরকারি স্কুলে এই প্রকল্প হলে আমরা বাধা দিতে পারি না। কিন্তু আমিও মনে করি, ছুটির দিনে প্রকল্পের কাজ করলে বেশি ভালো হতো।’
এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এই ঘটনাকে প্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বলে দাবি করেছে বিজেপি। খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি সদস্য শান্তি পাত্রের অভিযোগ, শাসক দল শিক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়ে এই প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে মানুষকে কাজ দেখানোর চেষ্টা করছে। যদিও বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্যা উমা পতি।
উমা পতি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সব ফালতু অভিযোগ। যাদের কোনও কাজকর্ম নেই, তারাই এ রকম অভিযোগ করছে। তাঁরা চাইলে আমাদের সঙ্গে এই কাজে সহযোগিতা করতে পারত। কিন্তু তা করেনি। এই প্রকল্পে মানুষ খুব উপকৃত হয়েছেন। এখানকার ক্যাম্পে ৩৭টি প্রকল্পের কাজ চলছে। একদিকে আমার পাড়ার সমাধান চলছে। অন্য দিকে স্কুল চলছে।’