• তীরে এসে তরী ডুবল ডায়মন্ড হারবারের, ডুরান্ডের ফাইনালে নর্থইস্টের কাছে আধ ডজন গোল হজম করে রানার্স অভিষেকের দল
    আনন্দবাজার | ২৪ আগস্ট ২০২৫
  • ডুরান্ড কাপের ফাইনালে উঠে আশা জাগিয়েছিল ডায়মন্ড হারবার। বিশেষ করে যে ভাবে কোয়ার্টার ফাইনালে জামশেদপুর ও সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে তারা ফাইনালে উঠেছিল, তাতে অনেকেই ভেবেছিলেন, প্রথম বারেই হয়তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির গড়বে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্লাব। কিন্তু ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ ডায়মন্ড হারবারের। নর্থইস্ট ইউনাইটেডের কাছে দাঁড়াতে পারল না তারা। যুবভারতীতে ৬-১ গোলে জিতল জন আব্রাহামের দল। পর পর দু’বার ডুরান্ড চ্যাম্পিয়ন হল তারা। গত বার ফাইনালে মোহনবাগানকে হারিয়েছিল নর্থইস্ট। এ বার বাংলার আর এক ক্লাবকে হারাল তারা। তবে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে লড়ে জিততে হয়েছিল নর্থইস্টকে। এ বার আধ ডজন গোল চাপিয়ে প্রতিপক্ষকে দাঁড় করিয়ে হারাল তারা।

    যুবভারতীতে ডুরান্ড ফাইনালে দু’দলের ফর্মেশনই এক ছিল। ৪-৩-৩ ছকে খেলা শুরু করেছিলেন দুই কোচ। শুরুর ১০ মিনিট নর্থইস্টের। তাদের ফুটবলারদের মধ্যে বেশি বোঝাপড়া চোখে পড়ছিল। গত বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ফাইনালের চাপ চোখে পড়ছিল না আলাদিন আজেরাই, পার্থিব গগৈদের খেলায়। অন্য দিকে ডায়মন্ড হারবারের ফুটবলারদের দেখে বোঝা যাচ্ছিল, কিছুটা হলেও চাপে তাঁরা। বৃষ্টি ভেজা মাঠে দূর থেকে শট নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় নর্থইস্টের ফুটবলারদের পায়ে। শুরুতেই আলাদিনের দূরপাল্লার শট ডায়মন্ড হারবারের গোলরক্ষক মিচু মিরশাদকে সমস্যায় ফেলে। সামনে ড্রপ খাওয়ায় বল ধরতে পারেননি মিচু। ফিরতি বলে হেড করেন পার্থিব। সেই বল অবশ্য গোলে ঢোকার আগে ধরে ফেলেন মিচু।

    ১০ মিনিটের পর খেলায় ফেরে ডায়মন্ড হারবার। দুই প্রান্ত ব্যবহার করতে শুরু করে তারা। ডান প্রান্তে জবি জাস্টিন ও বাঁ প্রান্তে গিরিকের গতি সমস্যায় ফেলছিল নর্থইস্টকে। ফলে সুযোগ তৈরি করতে শুরু করে বাংলার ক্লাব। কয়েকটা সুযোগও পায় তারা। ২২ মিনিটের মাথায় গিরিকের ক্রসে উড়ন্ত হেড করেন জবি। তাতে গতি থাকলেও বল সরাসরি গোলরক্ষকের কাছে যাওয়ায় গোল হয়নি। চলতি প্রতিযোগিতায় সেট পিস থেকে প্রচুর গোল করলেও ওপেন প্লে থেকে গোল করতে সমস্যা হয়েছে ডায়মন্ড হারবারের। সেই সমস্যা এই ম্যাচেও দেখা গেল। তারই সুযোগ নিল নর্থইস্ট।

    ২২ মিনিটের মাথায় প্রথম গোল করে নর্থইস্ট। কর্নার থেকে ডায়মন্ড হারবারের রক্ষণের ভুলে বল পান আলাদিন। তাঁর শট মিচু বাঁচালেও ফিরতি বল থেকে গোল করে যান আশির। এগিয়ে যাওয়ার পর নর্থইস্টের খেলার ঝাঁজ বাড়ে। অনেক বেশি জমাট দেখায় তাদের। মাঝমাঠের দখল ছিল নর্থইস্টের পায়ে। দেখে বোঝা যাচ্ছিল জুয়ান পেদ্রো বেনালির পরিকল্পনার সামনে অসহায় হয়ে পড়েছেন কিবু ভিকুনা। প্রথমার্ধের বিরতির আগে ব্যবধান বাড়ায় ডায়মন্ড হারবার। বাঁ প্রান্তে বল পেয়ে অনেকটা দৌড়ে বক্সে ঢোকেন পার্থিব। তাঁর ডান পায়ের ইনস্টেপ থামাতে পারেননি মিচু। ২-০ গোলে এগিয়ে বিরতিতে যায় নর্থইস্ট।

    দ্বিতীয়ার্ধেও খেলার এক ছবি। নর্থইস্টের আক্রমণ অনেক সংগঠিত ছিল। বিশেষ করে গত বারের আইএসএলের সর্বাধিক গোলদাতা আলাদিনের খেলা সমস্যায় ফেলছিল ডায়মন্ড হারবারকে। সেই আলাদিনের পায়েই তৈরি হল তৃতীয় গোলের আক্রমণ। আলাদিনের ঠিকানালেখা পাস ধরে গোল করেন থোই সিংহ।

    ০-৩ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরেও হাল ছাড়েনি ডায়মন্ড হারবার। জবি, লুকা মায়েচেনরা মাঝেমধ্যেই নর্থইস্টের বক্সে পৌঁছে যাচ্ছিলেন। ৬৮ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে হেড করেন জবি। সেই বল মায়েচেনের মাথায় লেগে গোলে ঢুকে যায়। তার আগে পর্যন্ত নর্থইস্টের গোলরক্ষক গুরমিত সিংহ বেশ কয়েকটা ভাল সেভ করলেও সেই বল বাঁচাতে পারেননি। আগেই বাঁ দিকে সরে যাওয়ায় সময়ের মধ্যে দিক বদলে বল ধরতে পারেননি তিনি।

    এক গোল শোধ করার পর দেখে মনে হচ্ছিল, হয়তো খেলায় ফিরবে ডায়মন্ড হারবার। কিন্তু কোথায় কী? ৮১ মিনিটের মাথায় জ়াইরো নর্থইস্টের হয়ে চতুর্থ গোল করেন। তার কয়েক মিনিট পরেই গোল করেন গাইতান। দুই ফুটবলারই পরিবর্ত হিসাবে নেমেছিলেন। জোড়া গোলের পর খেলার ফল নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।

    তবে নর্থইস্টের আক্রমণ দেখে মনে হচ্ছিল, আরও গোল করবে তারা। সংযুক্তি সময়ে পেনাল্টি পায় নর্থইস্ট। গোল করেন আলাদিন। ৬-১ গোলে জিতে মাঠ ছাড়ে নর্থইস্ট। চওড়া হাসি দেখা গেল দলের মালিক জনের মুখে। যুবভারতীতে যে কয়েক হাজার নর্থইস্ট সমর্থক এসেছিলেন, তাঁরা দলের জয়ের উল্লাসে মাতলেন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)