মিল্টন সেন, হুগলি: হুগলি ত্রিবেণীর বাসিন্দা পারমিতা সিং আজ যোগা খেলায় এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। কিন্তু তার এই সাফল্যের কাহিনি যেন কোনও সিনেমার গল্পের থেকেও কম নয়। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তাঁর বাবা জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মা সঞ্চিতা সিং সমাজ আর আত্মীয়স্বজনের তোয়াক্কা না করে মেয়ের সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভেঙে গেলেও, মেয়ের স্বপ্নের ভিত বেঁচে রইল।
মায়ের বাড়িতে ফিরে এসে সঞ্চিতা সেলাই, এমব্রয়ডারি এবং ছোটখাটো কাজ করে সংসার চালিয়েছেন। তিনি বলেন— “আমি নিজে খেলোয়াড় হতে পারিনি, কিন্তু মেয়ের মধ্যে সেই স্বপ্ন দেখেছি। স্বামী বিয়ের জন্য চাপ দিয়েছিল, তাই আমি বাড়ি ছেড়ে দিই। কিন্তু মেয়ের স্বপ্নের হাত কখনও ছাড়িনি।” আজ সেই পারমিতা যোগার দুনিয়ায় দেশের নাম উজ্জ্বল করছে।
তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তাঁর যোগা কোচ সপনা পাল-এর এবং স্কুলের শিক্ষিকাদের, যাঁরা সবসময় পাশে থেকেছেন। সম্প্রতি ১৪ আগস্টে পারমিতা কন্যাশ্রী সম্মান পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে। মা বলেন— “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টা আর পরিকল্পনার জন্যই আজ মহিলারা অনেক উপকৃত হচ্ছেন।”
পারমিতার সাফল্য
স্কুল অলিম্পিয়াড ২০২৩ – রৌপ্য পদক
ত্রিপুরা ন্যাশনাল স্কুল গেমস – দ্বিতীয় স্থান
খেলো ইন্ডিয়া উইমেন লিগ (বিহার) – সোনা
মহারাষ্ট্র স্কুল গেমস – ব্রোঞ্জ
এবার লক্ষ্য – ন্যাশনাল ইয়ুথ গেমস (আন্ধ্রপ্রদেশ)-এ ভারতের প্রতিনিধিত্ব
কোচ সপনা পাল বলেন— “যখন পরিস্থিতির কাছে হেরে তাঁর মা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, তখন আমি বলেছিলাম— ‘মেয়েকে আমার কাছে রেখে দাও, এর দায়িত্ব আমার।’ আজ পারমিতার একাগ্রতা আর কঠোর পরিশ্রম দেখে বিশ্বাস হয়, একদিন সে এশিয়ান গেমস আর অলিম্পিকে ভারতের পতাকা উড়াবে।”
স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা মহুয়া চট্টোপাধ্যায় বলেন— “পারমিতা ভীষণ লাজুক, কিন্তু তাঁর পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস অসাধারণ। আমরা চাই সমাজ বুঝুক… মেয়েদের বিয়ে তখনই হোক, যখন তারা আত্মনির্ভরশীল হবে।”
নিজের কথা বলতে গিয়ে পারমিতা সিং বলেন— “মেয়েরা শুধু বিয়ের জন্য জন্মায় না। তাদেরও স্বপ্ন দেখার আর তা পূরণের অধিকার আছে। আমি বাবাকে কথায় নয়, সাফল্যে জবাব দেব।”
আজ পারমিতা শুধু একজন খেলোয়াড় নন, বরং সাহস ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। তাঁর গল্প হাজারো কন্যার জন্য এক বার্তা— যদি মা-বাবা মেয়েদের পাশে থাকেন, তবে কোনও শক্তিই তাদের আটকাতে পারবে না। কন্যারা বোঝা নয়, দেশের আসল শক্তি।