• তবে কি সত্যিই খুন হয়েছিলেন ফতেমা? হাইকোর্টের নির্দেশে চার মাস পর কবর থেকে তোলা হল দেহ...
    আজকাল | ২৪ আগস্ট ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে খুন করার অভিযোগে মৃত্যুর  চার মাস পর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ফের একবার তার দেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের নির্দেশে রবিবার ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিশাল পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতিতে রঘুনাথগঞ্জ থানার তেঘরী- হাজীপাড়া এলাকায় একটি কবর থেকে ফতেমা বিবি (২০) নামে ওই গৃহবধূর মৃতদেহ তোলা হয়। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তা কল্যাণীর এইমসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের করার জন্য। বছর খানেক আগে তেঘরী এলাকার বাসিন্দা ফতেমা খাতুন নামে ওই মহিলার সঙ্গে পেশায় মুহুরী ইজাজ আহমেদ নামে এক যুবকের বিয়ে হয়।

    মৃতার পরিবারের লোকেদের দাবি, বিয়ের সময় পণ হিসেবে ইজাজকে প্রায় ২ লক্ষ টাকা, সোনার গয়না সহ নানা উপহার দেওয়া হয়েছিল। যদিও তারপর থেকে কোনওদিনই ইজাজের টাকার দাবি কমেনি। অভিযোগ, ফতেমাকে সে নিয়মিত বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিত। টাকা আনতে না পারলেই তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করা হত বলে অভিযোগ। এই বছরের প্রথম থেকে একটি জমি কেনার জন্য ইজাজ, ফতেমার বাড়ির লোকেদের কাছ থেকে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা দাবি করেছিল বলে অভিযোগ। সেই টাকা দিতে না পারায় গত ২৯ এপ্রিল ফতেমাকে শ্বাসরোধ করে খুন করার অভিযোগ ওঠে। রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ সেই সময় দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করেছিল।

    এরপর দেহ কবর দেওয়া হয়। ফতেমার ময়নাতদন্তের ভিত্তিতে যে রিপোর্ট পেশ হয়েছিল তাতে মৃতার পরিবারের লোকেরা তাদের সন্তুষ্ট হয়নি। এরপরই তারা কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের আদালতে মামলা দায়ের করে। শনিবার দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশনামা জারি করে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ তাঁর আদেশনামায় লিখেছেন, মৃতার পরিবারের আইনজীবী ফতেমার প্রথম ময়নাতদন্তের ‘ইনকোয়েস্ট রিপোর্ট’ এবং ‘পোস্টমর্টেম রিপোর্টের’ মধ্যে বেশ কিছু অসামঞ্জস্য চিহ্নিত করেছেন। ফতেমার আইনজীবীর বক্তব্য শুনে আদালত জানতে পারে মৃতার শরীরে ভোঁতা কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। যদিও পুলিশ সূত্রের খবর  ফতেমার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ‘অটোপসি সার্জন’ পরিষ্কার লিখেছেন, ‘দেহে কোনও বাহ্যিক আঘাতের চিহ্ন নেই।'

    মৃত্যুর দুটি ভিন্ন তথ্য সামনে আসায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শনিবার নির্দেশ দেন ফতেমার দেহ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করার জন্য। মৃতার পরিবারের দাবি মেনে কল্যাণীর এইমসে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী ২৯ আগস্ট আদালতে ওই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রবিবার সকালে ফতেমা খাতুনের স্বামী ইজাজ আহমেদকে সঙ্গে নিয়েই পুলিশ কবর থেকে দেহ তোলে। এই ঘটনা দেখার জন্য গ্রামে প্রচুর মানুষের ভিড় জমে যায়।

    ফতেমা বিবির মা পলি বিবি অভিযোগ করেন, ‘বিয়ের পর থেকেই আমার মেয়েকে, জামাই ইজাজ ছাড়াও মেয়ের শাশুড়ি, জা, দেওর, শ্বশুর চরম অত্যাচার করত। মেয়ের বিয়েতে আমরা ইজাজকে দু’লক্ষ টাকা নগদ দিয়েছিলাম। তারপরও বারে বারে তাকে ছ’লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। নতুন নতুন জমি কেনার জন্য মাঝেমধ্যেই ইজাজ আমার মেয়েকে বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিত। সেই টাকা মেয়ে দিতে না পারায় শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে খুন করে ঝুলিয়ে দেয়। এরপর ইজাজ ফুটবল খেলতে চলে যায়। মেয়ের মৃত্যুর খবর আমাদেরকে জানানোই হয়নি।’ মৃতার দিদি হাসিনা খাতুন বলেন, ‘শ্বশুরবাড়িতে আমার বোন খেতে বসলে তাকে লাথি মেরে তুলে দেওয়া হত। এর পাশাপাশি প্রায় প্রতিদিনই তাকে বাবার বাড়ি থেকে বিভিন্ন জিনিস আনার জন্য চাপ দেওয়া হত। শ্বশুরবাড়ির অর্থের দাবি মেটাতে না পারায় আমার বোনকে বিয়ের এক বছরের মধ্যে খুন করা হয়।’
  • Link to this news (আজকাল)