• ধর্মীয় শংসাপত্র বিলি নিয়ে শান্তনু-সুব্রত বিবাদ, দু’ভাইয়ের কোন্দলে ঠাকুরবাড়িতে অশান্তি
    প্রতিদিন | ২৪ আগস্ট ২০২৫
  • জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: ধর্মীয় শংসাপত্র দেওয়া নিয়ে বনগাঁর ঠাকুরবাড়িতে দুই ভাইয়ের সংঘাত। বিজেপি সাংসদ বনাম বিধায়কের দ্বন্দ্বে গেরুয়া শিবিরে আরও চওড়া ফাটল। বচসায় জড়ালেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহা সংঘাধিপতি তথা বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর ও সংঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। এদিকে সুব্রত ও রানি ঠাকুর (সুব্রত ঠাকুর ও শান্তনু ঠাকুরের মা) বৈঠক করেন মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের সঙ্গে। তাতে রাজনৈতিক মহল নতুন সমীকরণ দেখছে। 

    শান্তনুর দাবি, তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন তাঁর দাদা সুব্রত ঠাকুর। বিজেপি বিধায়ক সুব্রত অবশ্য শান্তনুর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। সুব্রতর দাবি, “ওটা শান্তনুর মনের কথা। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিট না পেলে ও (শান্তনু) নিজেই তৃণমূলে যেত। আমার যোগ দেওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।” পাশাপাশি জানান, ঠাকুরবাড়ি ও মতুয়াদের স্বার্থে তিনি তাঁর জেঠিমা মমতাবালা ঠাকুরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁর কাছে আগে পরিবার, পরে রাজনীতি।

    ঠাকুরবাড়িতে ধর্মীয় শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে। সুব্রত ঠাকুর ও শান্তনু ঠাকুর দু’জনই আলাদা করে সেই শংসাপত্র দিচ্ছেন। শনিবার শান্তনু শিবিরের পক্ষ থেকে নাটমন্দিরে বিশেষ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। তাতেই আপত্তি জানান সুব্রত। শান্তনুর অভিযোগ, শনিবার সেই ক্যাম্পে গিয়ে উপস্থিত মতুয়া ভক্তদের হুমকি দেন বিজেপি বিধায়ক। সেই অভিযোগের পালটা দিয়ে সুব্রত বলেন, “নাটমন্দিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। সেখানে ক্যাম্প করলে অসুবিধা হবে। তাই ওদের সরে যেতে বলি।”

    সুব্রত অভিযোগ তোলেন ঠাকুরবাড়ির ক্ষমতা কুক্ষিগত করে দালালরাজ চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু। তিনি বলেন, “শান্তনু নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে দালালরাজ চালাচ্ছে। আমি দলমত নির্বিশেষে সকল মতুয়াদের কাছে এর বিচার চাইছি।” তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বলেন, “আমার কাছে আগে পরিবার। তারপরে রাজনীতি। মাকে নিয়ে আমি জেঠিমা ও বোনের সঙ্গে বৈঠক করেছি।”

    শান্তনু ঠাকুরের মা ছবিরানি ঠাকুরের অভিযোগ, “শান্তনুর নেতৃত্বে কিছু লোক ঠাকুরবাড়ির পরিবেশ নষ্ট করছে। সুব্রত ঠাকুর মতুয়া মহা সংঘাধিপতি হিসাবে ন্যায্য অধিকারের দাবি নিয়ে বড়দি মমতাবালা ঠাকুরের সঙ্গে কথা বলেছে।” আবার শান্তনুর দাবি, “আমি কারও অধিকার কাড়ছি না। কে মমতাবালা ঠাকুর? সুব্রত তৃণমূলে যোগ দেবে। শুধু পতাকা ধরতে বাকি আছে। আমি মন্ত্রী হয়ে গিয়েছি তাই হিংসা হচ্ছে সুব্রতর। তাই তৃণমূলে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছে। সবটাই অভিনয়।”

    বৈঠকের ব্যাপারে মমতাবালা ঠাকুর বলেন, “সুব্রতরাই আমার কাছে আসে। সুব্রত ও শান্তনু দু’জনই আমার সন্তানসম। তাই আমার উচিত সেখানে গিয়ে গণ্ডগোল মেটানো। তাই গিয়েছিলাম।” তৃণমূলে যোগ দেওয়ার বিষয়ে তাঁর সঙ্গে সুব্রতর কোনও কথা হয়নি বলেই জানিয়েছেন মমতাবালা। ঠাকুরবাড়ির এই কাজিয়ায় নতুন করে বিজেপির ঘরোয়া অশান্তিকে প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে। সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের সম্ভাবনা দেখছে রাজনৈতিক মহল।
  • Link to this news (প্রতিদিন)