• মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে বিজেপির দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে! বড়ছেলে বিধায়ক সুব্রতের পাশে মা এবং তৃণমূল, ছোটছেলে শান্তনুর পাশে বাবা
    আনন্দবাজার | ২৪ আগস্ট ২০২৫
  • মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে বিজেপির অভ্যন্তরীণ বিবাদ প্রকাশ্যে এল। তৃণমূল সাংসদের সঙ্গে বিজেপি বিধায়কের ‘হাত মেলানো’ নিয়েও তুঙ্গে উঠল জল্পনা। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে তোপ দাগলেন মহাসঙ্ঘাধিপতি তথা গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর।

    দুই ভাইয়ের এই দ্বন্দ্বে বড় সুব্রতের পাশে দাঁড়ালেন মা ছবিরানি ঠাকুর এবং তৃণমূল সাংসদ তথা ঠাকুর পরিবারের আর এক সদস্যা মমতাবালা ঠাকুর। আবার তৃণমূল সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান সেবায়েত মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর বড়ছেলে সুব্রতের আচরণের নিন্দা করে ছোটছেলে শান্তনুকে সমর্থন করলেন।

    দেশে সিএএ কার্যকর হওয়ার পর থেকেই ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে মতুয়া সমাজের জন্য সহযোগিতা শিবির চালু করে দেওয়া হয়েছিল। ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’র (এসআইআর) তোড়জোড় শুরু হতেই বিজেপি রাজ্যের নানা প্রান্তে এই ‘সিএএ সহযোগিতা শিবির’ খোলা শুরু করেছে। ঠাকুরবাড়ির সহযোগিতা শিবিরেও তৎপরতা বেড়েছে। এলাকার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনুর উদ্যোগে ঠাকুরবাড়ির নাটমন্দিরে শিবিরটি চালু হয়। সেখানে মতুয়া সমাজের যাঁরা উদ্বাস্তু হয়ে ও-পার বাংলা থেকে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাঁদের সিএএ আবেদন জমা দিতে সহায়তা করা হচ্ছে। সিএএ-র আওতায় আবেদন জমা দিতে হলে ধর্মীয় পরিচিতি সংক্রান্ত শংসাপত্র জরুরি। ঠাকুরবাড়ির নাটমন্দির থেকে সেই শংসাপত্রই দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু রবিবার সেই শিবিরকে কেন্দ্র করেই দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্ব তথা বিজেপির অভ্যন্তরীণ বিবাদ প্রকাশ্যে এসেছে। সুব্রতের প্রশ্ন, ‘‘নাটমন্দির ভক্তদের জায়গা, সেখানে কেন সিএএ সহযোগিতা শিবির চলবে?’’ শান্তনু বলছেন, ‘‘নাটমন্দিরে তো ভক্তদের জন্যই কাজ চলছে। কোনও রাজনৈতিক কাজ তো চলছে না। সরকারের কাছে আবেদন জমা দিতে মতুয়া ভক্তদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্যই তো শিবির খোলা হয়েছে।’’

    শনিবার শান্তনু নাটমন্দিরে বিশেষ শিবিরের আয়োজন করায় তা নিয়ে আপত্তি তোলেন সুব্রত। অভিযোগ, সেখানে গিয়ে মতুয়া ভক্তদের হুমকি দিয়েছেন বিধায়ক। সুব্রতের দাবি, নাটমন্দিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। সেখানে শিবির করলে অসুবিধা হতে পারে। তাই তিনি আপত্তি করেছিলেন। কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনুর বিরুদ্ধেও ঠাকুরবাড়ির ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি বিধায়ক।

    সুব্রত অবশ্য একা নন। তাঁর জেঠিমা তথা তৃণমূলের মমতাবালা ঠাকুরও প্রকাশ্যে সুব্রতের পক্ষ নিয়েছেন। শান্তনুর উদ্যোগে চলা সহযোগিতা শিবির নাটমন্দিরে কেন চলবে? প্রশ্ন মমতাবালারও। সুব্রত জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি তাঁর মা ছবিরানি এবং জেঠিমা মমতাবালার সঙ্গে কথা বলেছেন। বিজেপি বিধায়কের অভিযোগ, শান্তনু তাঁর মা ছবিরানিকেও ‘কুকথা’ বলেছেন।

    শান্তনু অবশ্য সুব্রতর বিরুদ্ধে সরাসরি ‘তৃণমূলে যাওয়ার চেষ্টা’ করারই অভিযোগ তুলেছেন। মমতাবালার সঙ্গে সুব্রতের বৈঠকের প্রেক্ষিতে সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়, ‘‘সুব্রত ঠাকুর তৃণমূলে যেতে চাইছেন। মন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা হয়েছে। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যেতে হলে কোনও একটা অজুহাত তো চাই। তাই অকারণে একটা অশান্তি তৈরি করছেন। এই অশান্তিকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করে তৃণমূলে যেতে চান।’’

    পাল্টা সুব্রত বলেন, ‘‘পরিবার আমার কাছে আগে। পরে রাজনীতি। মাকে নিয়ে আমি জেঠিমা আর বোনের সঙ্গে বৈঠক করেছি।’’ সুব্রতের সঙ্গে বৈঠকের কথা অস্বীকার করেননি মমতাবালাও। তাঁর বক্তব্য, সুব্রতের সঙ্গে তাঁর যা কথা হয়েছে, তা শুধু নাটমন্দির এবং ভক্তদের সুবিধা-অসুবিধা সংক্রান্ত। তাঁর সঙ্গে বিজেপি বিধায়কের কোনও রাজনৈতিক কথা হয়নি।

    সুব্রত এবং শান্তনু সহোদর। দুই ভাইয়ের এই অশান্তিতে তাঁদের মা ছবিরানি বড়ছেলে সুব্রতের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। ছবিরানি ঠাকুরের অভিযোগ, “শান্তনুর নেতৃত্বে কিছু লোক ঠাকুরবাড়ির পরিবেশ নষ্ট করছে। সুব্রত ঠাকুর মতুয়া মহা সঙঘাধিপতি হিসাবে ন্যায্য অধিকারের দাবি নিয়ে বড়দি মমতাবালা ঠাকুরের সঙ্গে কথা বলেছে।”

    কিন্তু বাবা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর দাঁড়িয়েছেন শান্তনুর পাশে। নাটমন্দিরে ‘সিএএ সহযোগিতা শিবির’ করার অনুমতি মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান সেবায়েত হিসাবে তিনিই দিয়েছেন বলে মঞ্জুলকৃষ্ণ জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যদি কোনও মতপার্থক্য থেকে থাকে, তা হলে পরিবারের মধ্যে আলোচনা করে তা মিটিয়ে নেওয়া যেত। তা না করে ঠাকুরবাড়িতে বাইরের আবর্জনা জড়ো করা হচ্ছে কেন? এখানে তৃণমূলকে ঢোকানো হচ্ছে কেন? সুব্রত এবং ছবিরানির এই আচরণকে আমি সমর্থন করছি না।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)