কুকুররা আমাদের সন্তানসম, ওদের মাংস পাচার হলে সরব তো হতেই হবে: শ্রীলেখা
আনন্দবাজার | ২৪ আগস্ট ২০২৫
কলকাতার পরে দিল্লির একটি আশ্রয়কেন্দ্রে কুকুরদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, আশ্রয়কেন্দ্র থেকে কুকুরের মাংস পাচারের অভিযোগও উঠেছে। পর পর এমন ঘটনা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করলেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। খোলা রাস্তায় মানুষ অবাধে মলমূত্র ত্যাগ করতে পারে। কিন্তু কুকুরদের খাওয়ালেই তা বড় অপরাধ? প্রশ্ন তুললেন অভিনেত্রী।
শ্রীলেখা নিজেও পশুপ্রেমী। বাড়িতে পোষ্য রয়েছে তাঁর। পাশাপাশি, পথকুকুরদের খাইয়েও একাধিক বার বিপদের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। কিছু দিন আগেই কলকাতা পুরসভার ১৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বেহালা পর্ণশ্রী থানা এলাকায় পোষ্য নির্যাতন এবং হামলার অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দারা ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মরা কুকুরের মাংস বিভিন্ন রেস্তরাঁয় পাচারের অভিযোগ আনেন। প্রায় একই ঘটনা এ বার দিল্লির রোহিনীতে। পশুপ্রেমীরা প্রশ্ন তুলছেন, “আশ্রয়কেন্দ্র কি তবে এমনই হয়?” এই খবরে শিউরে উঠেছেন শ্রীলেখাও। তিনি বলেন, “কী সাংঘাতিক ঘটনা! দিল্লির সরকারকে কী বলব! গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে কুকুরগুলোকে।”
সম্প্রতি সু্প্রিম কোর্ট তার নতুন নির্দেশে বলেছে, “পথকুকুরদের প্রতিষেধক দিয়ে এবং নির্বীজকরণ করে আবার পথেই ছেড়ে দিতে হবে। শুধু জলাতঙ্ক-আক্রান্ত ও আগ্রাসী কুকুরদের আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে দেওয়া হবে।” এর পরেই প্রশ্ন উঠছে, কুকুর আগ্রাসী কি না, কে সেটা ঠিক করবে?
এই প্রসঙ্গে শ্রীলেখা বলেছেন, “আসলে আমরা কোনও ভাবেই সফল নই। মানুষের এক অদ্ভুত ক্রোধ রয়েছে অবোলা কুকুরদের উপর। মানুষ নিজে রাস্তায় যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করে। কিন্তু ওদের খেতে দিলেই সমস্যা। কত মার খাবে এই কুকুরগুলো! হাজার বার মার খাওয়ার পরে ফিরে একবার ভৌ ভৌ করলেই ওদের দোষ হয়ে যাবে। কুকুরগুলো আজ কথা বলতে পারলে, মানুষ মুখ লুকোনোর জায়গা পেত না।”
রাস্তার ঠিক কোন জায়গায় কুকুরদের খেতে দেওয়া হবে, তা ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। এই বিষয়েও আপত্তি জানিয়েছেন শ্রীলেখা। অভিনেত্রী জানান, এই কুকুরগুলি এলাকাভিত্তিক হয়। নিজেদের এলাকায় অন্য পাড়ার কুকুরদের এরা প্রবেশ করতে করতে দেয় না। এর পিছনে বিজ্ঞানসম্মত কারণ রয়েছে। তাই অভিনেত্রীর প্রশ্ন, “ওদের নিয়ে আইন তৈরি করতে হলে, ওদের আরও ভাল করে চিনতে হবে না?”
শ্রীলেখা আরও একটি প্রশ্ন তোলেন। তাঁর কথায়, “যে সরকার গোমাতার পুজোর কথা বলে, তারাই আবার কুকুরের মাংস পাচারে আশকারা দেয়। আমি নিজে শেষ কবে পাঁঠার মাংস বা মুরগির মাংস খেয়েছি আমার মনে নেই। এটা ভিতর থেকে আসে। জোর করে হয় না। কুকুরদের আমরা সন্তানের মতো দেখি। আমরা ওদের প্রভু নই। বাবা-মা। সন্তানের মাংস পাচারের খবর শুনে সরব তো হতেই হবে।”
গত কয়েক দিন ধরেই পথকুকুরদের নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। অনেকে আবার সারমেয়প্রেমীদের খোঁচা দিচ্ছেন নানা ভাবে। কেউ বলছেন, “নিজেরাই দত্তক নিন পথকুকুরদের।” কেউ আবার বলছেন, “বিদেশি না নিয়ে দেশি কুকুর পুষলেই তো পারেন!” শ্রীলেখা জানান, তিনি দেশি কুকুরদেরই সবার আগে কাছে টেনে নিয়েছিলেন। অভিনেত্রীর কথায়, “যাঁরা কুকুর ভালবাসেন, তাঁরা দেশি-বিদেশি এই তারতম্য করেন না। মানুষ খুন-ধর্ষণ করছে। কিন্তু যত রাগ কুকুরদের উপরে। সব কুকুরই যেন বাচ্চাদের কামড়াতে উদ্যত হয়ে রয়েছে।”
কুকুরদের পেট ভরা থাকলে, ওদের মধ্যে থেকেও আগ্রাসী ভাব চলে যাবে বলে মনে করেন শ্রীলেখা। অভিনেত্রী বলেন, “হাই কোর্টের এক বিচারকই আমাকে বলেছেন, ওঁদের আদালতচত্বরে কুকুর বেড়ে গিয়েছিল। তাই ওঁরা ভাল করে খাওয়ানো শুরু করলেন। পেট ভরা থাকায় কুকুরগুলো নিশ্চিন্তে ঘুমোয়। যে কোনও প্রাণীরই পেট খালি থাকলে মেজাজ ভাল থাকে না। ওরা তো মানুষ নয় যে, ভরা পেটেও অন্য মানুষের ক্ষতি করার ষড়যন্ত্র করবে! মানুষের স্বভাবই হল ক্ষতি করা। মানুষ যে কত কুকুরের ছানাকে পিষে দেয় রোজ, তার ইয়ত্তা নেই!”