ঠাকুরনগরের মতুয়া ঠাকুরবাড়ি ঘিরে বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব এবার প্রকাশ্যে। বড় ছেলে গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর এবং ছোট ছেলে বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের দ্বন্দ্ব এখন সরগরম রাজ্য রাজনীতি। সিএএ সহযোগিতা শিবির নিয়ে তৈরি হওয়া এই বিরোধে একদিকে মা ছবিরানি ঠাকুর এবং তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর দাঁড়িয়েছেন সুব্রতের পাশে, অন্যদিকে বাবা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর সমর্থন করছেন শান্তনুকে।
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার। ঠাকুরবাড়ির নাটমন্দিরে শান্তনুর উদ্যোগে সিএএ আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করতে সহযোগিতা শিবির চালু হয়। মতুয়া সমাজের যাঁরা উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, তাঁদের সিএএ আবেদনে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় শংসাপত্র দিতে সহায়তা করা হচ্ছে সেখানে। কিন্তু এই উদ্যোগেই আপত্তি তুলে সরব হন সুব্রত। তাঁর অভিযোগ, “নাটমন্দির ভক্তদের জায়গা, সেখানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হওয়া উচিত নয়।”
তবে শান্তনুর বক্তব্য আবার অন্যরকম। তাঁর দাবি, “নাটমন্দিরে কোনও রাজনৈতিক কাজ হচ্ছে না। ভক্তদের সুবিধার জন্যই শিবির চালু করা হয়েছে।” তিনি অভিযোগ তুলেছেন, সুব্রত ইচ্ছে করেই অশান্তি তৈরি করছেন এবং তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। পাল্টা জবাবে সুব্রত বলেন, পরিবারের সম্মানই তাঁর কাছে সবার আগে, রাজনীতি পরে।
এই দ্বন্দ্বে পরিবারের অন্য সদস্যরাও সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন। মা ছবিরানি ঠাকুর এবং জেঠিমা মমতাবালা ঠাকুর সুব্রতের পাশে দাঁড়িয়ে শান্তনুর ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। ছবিরানি অভিযোগ করেছেন, “শান্তনুর নেতৃত্বে কিছু লোক ঠাকুরবাড়ির পরিবেশ নষ্ট করছে।” অন্যদিকে বাবা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর জানিয়েছেন, নাটমন্দিরে শিবির চালানোর অনুমতি তাঁর কাছ থেকেই নেওয়া হয়েছে এবং সুব্রতের আচরণকে তিনি সমর্থন করেন না।
যদিও রাজনৈতিক মহলের মতে, ঠাকুরবাড়ির এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কেবল পারিবারিক সংঘাত নয়, বরং মতুয়া ভোটব্যাঙ্ককে ঘিরে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের বড় ছবি। একদিকে বিজেপির সিএএ কার্যকর করার প্রচার, অন্যদিকে তৃণমূলের সক্রিয় উপস্থিতি—সব মিলিয়ে মতুয়া রাজনীতিতে যে নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে, তার প্রভাব পড়তে পারে আগামি নির্বাচনী সমীকরণেও।