• ধর্মীয় শংসাপত্র বিতরণ ঘিরে ঠাকুরবাড়িতে দ্বন্দ্ব, শান্তনু-সুব্রতের বিবাদে অস্বস্তিতে বিজেপি
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৫ আগস্ট ২০২৫
  • বনগাঁর ঠাকুরবাড়িতে ধর্মীয় শংসাপত্র বিতরণকে কেন্দ্র করে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়াল। ঠাকুরবাড়ির দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এবং অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহা সঙ্ঘাধিপতি তথা বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এতটাই চরমে উঠেছে যে তা শুধু ঠাকুরবাড়ির অন্দরের বিষয় না থেকে রাজনীতির ময়দানেও তীব্র প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।

    সম্প্রতি নাটমন্দিরে শান্তনু ঠাকুরের শিবিরের পক্ষ থেকে ধর্মীয় শংসাপত্র বিতরণের এক বিশেষ শিবির আয়োজন করা হয়। সেই শিবির ঘিরেই বিবাদের সূত্রপাত। শান্তনু শিবিরের দাবি, অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা মতুয়া ভক্তদের হুমকি দেওয়া হয় সুব্রত শিবিরের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে, সুব্রত ঠাকুরের বক্তব্য, নাটমন্দির একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, যেখানে এই ধরনের প্রশাসনিক শিবির হওয়া উচিত নয়। ফলে, তিনি শান্তনু ঘনিষ্ঠদের সরে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই দু’ভাইয়ের দ্বন্দ্ব আরও প্রকাশ্যে চলে আসে।

    সুব্রত ঠাকুর অভিযোগ তোলেন, ঠাকুরবাড়ির ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করে রেখেছেন শান্তনু ঠাকুর। তাঁর দাবি, শান্তনু ঠাকুর ‘দালালরাজ’ চালাচ্ছেন এবং মতুয়া সমাজকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন। তিনি জানান, তাঁর কাছে পরিবারের স্বার্থই আগে, রাজনীতি পরে। সেই সূত্র ধরেই তিনি জেঠিমা তথা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তাঁর মা-ও।

    এই বৈঠক ঘিরেই শুরু হয় নতুন রাজনৈতিক চর্চা। শান্তনু ঠাকুর দাবি করেন, তাঁর দাদা সুব্রত ঠাকুর খুব শীঘ্রই তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন। যদিও সুব্রত এই দাবি একেবারেই উড়িয়ে দেন। তাঁর সাফ বক্তব্য, ‘ওটা শান্তনুর নিজের মনগড়া কথা। বিজেপির টিকিট না পেলে শান্তনু নিজেই তৃণমূলে যেত।’ সুব্রতের মতে, তিনি মতুয়া সমাজের বৃহত্তর স্বার্থেই মমতাবালার সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন। রাজনৈতিক যোগদান নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।

    শান্তনুর মা-ও এই বিবাদে মুখ খোলেন। তিনি অভিযোগ করেন, শান্তনুর নেতৃত্বে কিছু মানুষ ঠাকুরবাড়ির পরিবেশ নষ্ট করছে। তাঁর মতে, সুব্রত ঠাকুর মতুয়া মহা সঙ্ঘাধিপতি হিসেবে ন্যায্য অধিকার চাইতেই বড়দি মমতাবালার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

    অন্যদিকে, শান্তনু ঠাকুর স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি কারও অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন না। তাঁর কটাক্ষ, ‘আমি মন্ত্রী হয়েছি বলেই সুব্রতের হিংসে হচ্ছে। তাই মন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে তৃণমূলের দিকে ঝুঁকছে।’ মমতাবালা ঠাকুর অবশ্য এই বিষয়ে খুব সংযত বক্তব্য রেখেছেন। তিনি জানান, সুব্রত ও শান্তনু – দু’জনই তাঁর সন্তানসম। পরিবারে শান্তি ফেরানোর স্বার্থেই তিনি বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিলেন। তৃণমূলে যোগদানের বিষয়ে সুব্রতের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি বলেও স্পষ্ট করেন তিনি।

    এই ঘটনাক্রমে বিজেপির অন্দরের দ্বন্দ্ব একবারে প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ঠাকুরবাড়ির অভ্যন্তরীণ সমস্যা এখন রাজনীতির প্রধান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই পরিস্থিতি শুধু ঠাকুরবাড়ির সংকট নয় বরং এর প্রভাব পড়তে পারে আগামী নির্বাচনে মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে। পাশাপাশি, শান্তনু-সুব্রতের এই দ্বন্দ্ব নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের দিকেও ইঙ্গিত করছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)