অভিভাবক হয়ে দুঃস্থ পরিবারের মেয়ের বিয়ে দিল খড়গ্রাম পুলিস
বর্তমান | ২৫ আগস্ট ২০২৫
সংবাদদাতা, কান্দি: দাঁড়িয়ে থেকে এক দুঃস্থ পরিবারের মেয়ের বিয়ে দিল খড়গ্রাম থানার পুলিস। রবিবারের ওই ঘটনা শেরপুর গ্রামের। এমনটা যে হতে পারে তা পাত্রী থেকে গ্রামের বাসিন্দারা, কেউই আশা করেননি।
প্রয়াত বাসার শেখের একমাত্র মেয়ে সুলেখা। অভিভাবক বলতে রয়েছেন একমাত্র মা— ফরিদা বিবি। পরিবারে রোজগেরে কেউ নেই। মা ও মেয়েতে মিলে পশুপালন ও হাতের কাজ করে কোনওমতে দু’ বেলা দু’ মুঠো অন্ন সংস্থান করেন। এভাবেই সংসার চলছিল। সুলেখার বয়স পঁচিশে হতে মেয়ের বিয়ের চিন্তা ফরিদা বিবিকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। কিছুদিন আগে সুলেখার জন্য গ্রামেই পাত্র মেলে। পাত্র জেলার শেখ পরিযায়ী শ্রমিক। তিনি সুলেখাকে বিয়ে করতে রাজি হন। বিয়ে ঠিক হয় রবিবার।
তবে বিয়ের খরচ জোগাড় করা ফরিদা বিবির পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় সাহায্য করতে বেরিয়েছিলেন তিনি। গত ২১ আগস্ট তিনি খড়গ্রাম থানায় গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করেন। পুলিস সমস্ত বিষয়টা জানার পর বিয়ের যাবতীয় আয়োজন করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
সেই আশ্বাসেই রবিবার বসে বিয়ের আসর। বোঝা যায় মিথ্যে ছিল না সেই আশ্বাস। প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছিল। সকাল থেকে বাজতে শুরু করে সাউন্ড বক্স। অতিথিদের জন্য সকালের চা থেকে শুরু করে জলখাবারে লুচি, তরকারি, মিষ্টি। দুপুরে ভাত, ডাল, সব্জি তরকারি, মাছ, মাংস ও দই। শতাধিক নিমন্ত্রিত পাতপেড়ে খাওয়াদাওয়া করেন। জনা তিরিশেক বরযাত্রীও চেটেপুটে খান।
বেলা ১২টা নাগাদ বিয়ের আসরে বাকিদের পাশাপাশি পুলিসও নব দম্পতিকে আশীর্বাদ করে। দাঁড়িয়ে থেকে পাত্রী বিদায়ও করে তারা। এতটা আশা করেননি সুলেখা। তিনি বলেন, হয়তো কোনও পুণ্য করেছিলাম। না হলে এভাবে আমার স্বপ্ন পূরণ হবে কেন? আমার শখ আহ্লাদ সব মিটিয়ে দিয়েছেন পুলিস কাকুরা। সুলেখার মা বলেন, মেয়ের বিয়ে যে এভাবে দিতে পারব তা গ্রামের লোকও ভাবতে পারেননি। পুলিসকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর পাত্র জানায়, বেশ ভালোই লাগছে। আমি ভেবেছিলাম মসজিদে গিয়ে বিয়ে করব। এভাবে অনুষ্ঠান করে বিয়ে হবে ভাবতেও পারিনি।
স্থানীয় ইন্দ্রাণী পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান হুমায়ুন কবীর বলেন, আমিও নিমন্ত্রিত ছিলাম। পুলিসের অনুরোধে দিনভর সব দেখাশোনা করেছি। তবে এদিন কনের আসল অভিভাবক ছিলেন পুলিস। খড়গ্রাম থানার ওসি সুরজিৎ হালদার হেসে বলেন, এদিনের কর্মসূচি ছিল রুটিনের বাইরে। একটি সামাজিক কাজে পুলিস সহযোগিতা করেছে।