অনলাইন ব্র্যান্ড তৈরি করে ঠেকুয়া বিক্রি স্টার্টআপ ব্যবসায় সাফল্য আদ্রার দুই ছাত্রের
বর্তমান | ২৫ আগস্ট ২০২৫
সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: ছটপুজোর সময় দেবতাকে নিবেদন করা হয় ঠেকুয়া। তবে এখন স্ন্যাক্স হিসেবেও এর জনপ্রিয়তা কম নয়। সেই ঠেকুয়াকে ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিয়ে চমক দিয়েছে আদ্রার দুই পড়ুয়া। স্টার্টআপ ব্যবসায় সারা দেশের কাছে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আদ্রার প্রত্যন্ত গ্রামের দুই কিশোর জয়ন্ত কর্মকার ও কৈলাস বাউরি। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই তারা ‘শুদ্ধ স্বাদ’ নামে ঠেকুয়ার অনলাইন ব্র্যান্ড গড়ে তুলেছে। তাদের ঠেকুয়ার খ্যাতি এখন বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র সহ ভারতের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। চালুর মাত্র তিনমাসের মধ্যেই কয়েকলক্ষ টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে তারা। প্রতিদিনই দেশের একাধিক রাজ্য থেকে অর্ডার আসছে। তাদের এই সাফল্যকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন পুরুলিয়াবাসী।
স্থানীয় বেকো উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে জয়ন্ত ও কৈলাস। কৈলাসের বাবা টোটো চালক। জয়ন্তর বাবার একটি পানের দোকান রয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবার। ফলে তাদের মধ্যে কিছু করার জেদ চেপে বসে। দুই কিশোর ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখে, স্ন্যাক হিসেবে ঠেকুয়া খেলেও কেউ ব্র্যান্ড তৈরি করেনি। সেই থেকেই তারা সিদ্ধান্ত নেয় ঠেকুয়াকে নিয়ে একটি ব্র্যান্ড তৈরি করবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
আদ্রার প্রত্যন্ত গ্রাম কাঁটারাঙ্গুনির একটি ছোট বাড়িতে দুই বন্ধু ঠেকুয়া তৈরি করে। জয়ন্ত ও কৈলাস বলে, এবছর ছটপুজোর সময় ঠেকুয়ার প্রচুর চাহিদা দেখে এই ব্যবসা করার বিষয়ে মনস্থির করি। তারপর বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে নিজেদের তৈরি ঠেকুয়ার প্রচার চালাই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালো সাড়া পাওয়ার পর ধীরে ধীরে নিজেরাই ঠেকুয়া বিক্রির জন্য ওয়েবসাইট গড়ে তুলি। এখন সেই ওয়েবসাইটেই অর্ডার নেওয়া হয়। ক্রেতাদের কাছে অর্ডার অনুযায়ী ঠেকুয়া পৌঁছে দিতে একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। ফলে ঠেকুয়া প্যাকেজিং হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে।
মূলত বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশে ঠেকুয়া জনপ্রিয়। সাধারণত ছটপুজো উপলক্ষ্যে এটি তৈরি করা হয়। তবে এখন অনেকেই স্ন্যাক্স হিসেবে ঠেকুয়া পছন্দ করেন। ছটপুজোর এক মধুর স্মৃতি থেকেই জয়ন্ত ও কৈলাসের এই ব্র্যান্ড জন্ম নিয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা সারা দেশজুড়ে বিশ্বাসযোগ্য ও পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে।জয়ন্ত বলে, আমরা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করি। মাধ্যমিক দেওয়ার পরে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, দুই বন্ধু মিলে ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত হব। ছটপুজায় ঠেকুয়া খেয়ে ব্যবসার কথা মাথায় আসে। ঠেকুয়ার ভালো বাজার রয়েছে, সেটা জানা ছিল। পড়াশোনার ফাঁকে রোজ দু’-তিন ঘণ্টা সময় বের করে ঠেকুয়া তৈরি ও প্যাকেজিং করি। অর্ডারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখন আমাদের সঙ্গে আরও ১৫জন সমবয়সি বন্ধু যুক্ত হয়েছে। তারা সবাই মিলে কাজ করছে। কৈলাস বলে, আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, ব্যবসার কানেকশন তৈরির সবচেয়ে ভালো প্ল্যাটফর্ম সোশ্যাল মিডিয়া। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার নানা সাইটে ঠেকুয়ার ছবি ও গল্প পোস্ট করতে থাকি। -নিজস্ব চিত্র