• বাংলার জামদানিতে শ্রীকৃষ্ণের লীলাচিত্র দেড় কোটি টাকার বরাত মার্কিন প্রবাসীদের
    বর্তমান | ২৫ আগস্ট ২০২৫
  • অনিমেষ মণ্ডল, কাটোয়া: বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্য রক্ষায় শামিল হলেন মার্কিন প্রবাসীরা। বাংলার জামদানি শাড়িতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণর জীবনী আমেরিকায় প্রচারে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। পটচিত্রের আদলে ওইসব জামদানি শাড়ি তৈরির বরাত পেয়েছেন কাটোয়ার ঘোড়ানাশ গ্রামের তাঁতশিল্পীরা। এক-একটি শাড়ির দাম ৭০-৮০হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ১৫০টি শাড়ি নেবেন তাঁরা। মোট দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাভাষীদের হেনস্তার সময় মার্কিন প্রবাসীদের এই উদ্যোগ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে অনেকের অভিমত। 

    সম্প্রতি ভিনরাজ্যে বাংলায় কথা বলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠছে। ভাষা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে বাংলায়। জামদানি শাড়ি বাঙালির গর্বও বটে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রেম ও প্রতিবাদের প্রতীক। এই দুয়ের মেলবন্ধনে ভারতের বহুত্ববাদের তত্ত্বকে তুলে ধরতে চাইছেন মার্কিন প্রবাসী বাঙালিরা। তাঁদের এই প্রয়াস বাংলায় ধুঁকতে থাকা তাঁতশিল্পে প্রাণ সঞ্চার করবে বলে মত জামদানি শিল্পীদের। 

    প্রাচীনকালের সূক্ষ্ম মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে জামদানি শাড়ি বাঙালি মহিলাদের কাছে পরিচিত ছিল। মসলিনের উপর হাতের নকশা ফুটিয়ে তুলে জামদানি শাড়ি তৈরি করা হয়। পুরনোদিনের বাংলার তাঁতশিল্পীদের হাতে তৈরি জামদানি হারিয়ে যেতে বসেছিল। এখন সেই জামদানির কদর বাড়ছে। কাটোয়া-২ ব্লকের জগদানন্দপুর পঞ্চায়েতের ঘোড়ানাশ, মুস্থলী গ্রামের বহু মানুষ দীর্ঘদিন ধরে তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। এখানকার শিল্পীরা বিশ্ববাজারের চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিতে দিনরাত এক করে তৈরি করছেন স্কার্ফ, খাদি মসলিন, জামদানি শাড়ি। বহু পুরনো আমলে জামদানি দিয়ে নকশাওয়ালা শেরওয়ানির প্রচলনও ছিল। তাছাড়া মুঘল আমলেও জামদানির প্রচলন ছিল। পরে ধীরে ধীরে সেই জামদানি হারিয়ে গেলেও ফের বাংলার শিল্পীদের হাত ধরে ফিরে এসেছে। 

    ঘোড়ানাশ গ্রামের তাঁতশিল্পী রাঘবেন্দ্রসুন্দর দাস বলেন, আমেরিকার নিউজার্সি থেকে বরাত দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ১৫০টি জামদানি শাড়ি নেবেন। সেগুলিতে মূলত শ্রীকৃষ্ণের জীবনী ও লীলা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৪০টি শাড়ি বোনা হয়েছে। তিনশো কাউন্ট খাদির মসলিন সুতো দিয়ে বোনা হচ্ছে। শাড়িগুলি চওড়া এক মিটার ও লম্বা আড়াই মিটার। 

    প্রবাসীদের সৌজন্যে পুজোর আগে গ্রামের শিল্পীদের কাজের জোয়ার এসেছে। প্রায় ১০০জন শিল্পী এই কাজ করছেন। শ্রীকৃষ্ণের লীলা সূচ সুতোয় ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। গ্রামের শিল্পী স্বস্তিকা দে, জগদীশ দে, লাল্টু দত্ত বলেন, কোটি টাকার বরাত পাওয়া গিয়েছে। আমরাও দিনরাত এক করে কাজ করছি। এক-একটি জামদানি শাড়ি বুনতে তিন মাস সময় লাগে।  এলাকার শিল্পীরা জানান, বহু আগে থেকে জামদানি শাড়ির উপর হাতে করে নানা নকশা ফুটিয়ে তুলে তা আকর্ষণীয় করে তোলা হয়। মুঘল আমলেও জামদানির প্রচলন ছিল। পরে ধীরে ধীরে সেই জামদানি হারিয়ে গেলেও ফের বাংলার শিল্পীদের হাত ধরে ফিরে এসেছে।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)