• সরকারি যন্ত্র চাষিদের বিলি না করে লোহার দরে বিক্রি, আটক তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষ সহ দুই
    বর্তমান | ২৫ আগস্ট ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কাটোয়া: পাট ছাড়ানোর জন্য কৃষিদপ্তর এলাকার চাষিদের যন্ত্র দিয়েছিল। তার সাহায্যে পাট ছাড়ানো, জমিতে নিরান দেওয়া হতো। কিন্তু, চাষিদের সরাসরি বিলি না করে তা কৃষিদপ্তর থেকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান কাটোয়া-২ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে ওই যন্ত্র কর্মাধ্যক্ষের বাড়িতে পড়েছিল। এদিন ভাঙাচোরা কেনা একজন ফেরিওয়ালার কাছে কেজি দরে ওই যন্ত্র বিক্রি করায় গ্রামে শোরগোল পড়ে যায়। শাসকদলের নেতার এমন কীর্তিতে হতবাক গ্রামবাসীরা। তাঁরা রবিবার দুপুরে ওই নেতাকে হাতেনাতে ধরে পুলিসের হাতে তুলে দেন। এই ঘটনায় গ্রামে উত্তেজনা ছড়ায়। এবিষয়ে কাটোয়া থানার এক আধিকারিক বলেন, ফেরিওয়ালা ও ওই তৃণমূল নেতাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। 

    পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ওই নেতাকে শোকজ করা হবে। অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিস-প্রশাসন তদন্ত করে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। 

    কাটোয়া-২ ব্লকের শ্রীবাটি পঞ্চায়েতের মুল্টি গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। ২০২৪ সালে কাটোয়া-২ ব্লকের কৃষিদপ্তর বিনামূল্যে কৃষকদের পাট ছাড়ানো ও জমিতে নিরান দেওয়ার যন্ত্র বিলি করে। লোহার ওই যন্ত্রগুলি চাষিদের বিলি করার নাম করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ কোরবান মির্দা নিজের বাড়িতে এনেছিলেন। এদিন ওই নেতার স্ত্রী সেগুলি গ্রামে আসা ভাঙাচোরা কেনা ফেরিওয়ালাকে ডেকে বিক্রি করে দেন। ১৬ পিস যন্ত্র ফেরিওয়ালার কাছে লোহার দরে বিক্রি করা হয়। ২৫ টাকা কেজি দরে মোট ৫০ কেজি ওজন হয় যন্ত্রগুলির। 

    স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই যন্ত্রগুলি কোরবান সাহেবের কাছে চাইতে গেলে দিতেন না। ব্লকের কৃষিদপ্তরের কাছে চাইতে গেলে বলা হতো পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিন ফেরিওয়ালার কাছে ওই সরকারি কৃষি যন্ত্রপাতি দেখেই খেপে যান মুল্টি, সাগরপাড়া এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা ওই নেতা ও ফেরিওয়ালাকে আটকে রেখে কাটোয়া থানার পুলিসের হাতে তুলে দেন। 

    ওই গ্রামের বাসিন্দা বাবর আলি, সরিফ মির্ধা, আবদুর রহমান মোল্লা বলেন, ওই ভাঙাচোরা কেনা ফেরিওয়ালার কাছে যন্ত্রগুলি দেখেই বুঝতে পারি এগুলি সরকারি জিনিস। কোথা থেকে পেল জানতে চাইলে ফেরিওয়ালা জানায় এগুলি মুল্টি গ্রামের কোরবান মির্ধার বাড়ি থেকে কিনে এনেছে। তখনই আমরা বুঝতে পারি, কৃষকদের জন্য দেওয়া সরকারি অনুদানের কৃষিযন্ত্র চাষিদের না দিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। 

    যদিও অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ বলেন, আমি গত ২০২৪ সালে চাষিদের বিলি করব বলে ব্লকের কৃষিদপ্তর থেকে ওই যন্ত্রগুলি এনেছিলাম। কিছু বিলিও করেছিলাম। আর কিছু আমার গোডাউনে রাখা ছিল। ধান থাকায় যন্ত্রগুলি বের করা যায়নি। সেগুলি আমার স্ত্রী ভুল করে লোহার দরে বিক্রি করে দিয়েছে। সরকারি জিনিস বিক্রি যায় না।প্রশ্ন উঠছে কৃষিদপ্তরের ভূমিকা নিয়েও। কৃষকদের সরাসরি কৃষিযন্ত্রপাতি বিলি না করে কেন নেতার হাতে দেওয়া হল? তা তদন্ত করে দেখার জন্য দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা। তাঁরা বলছেন, কৃষিদপ্তর সরাসরি ওই যন্ত্র বিলি না করে কেন নেতার হাতে দিল। যদিও পূর্ব বর্ধমান জেলার কৃষিদপ্তরের অফিসার অমল মণ্ডল বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)