বিশ্বভারতীর ওয়েবসাইটে ছবি নেই স্বয়ং রবি ঠাকুরের, বিতর্ক
বর্তমান | ২৫ আগস্ট ২০২৫
ইন্দ্রজিৎ রায়, বোলপুর: বিশ্বভারতীর ওয়েবসাইট। সেখানে জ্বলজ্বল করছে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস ও উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষের ছবি। নেই শুধু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা। বিশ্বভারতী নামের সঙ্গে তিনি সমার্থক। তিনিই বাংলা-বাঙালির আবেগ। সেক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের প্রতি বিশ্বভারতীর এহেন ‘অবহেলা’কে ভালো চোখে দেখছেন না প্রাক্তনী, আশ্রমিক থেকে শুরু করে ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা। নিন্দার ঝড় বইছে সোশ্যাল মিডিয়ার একাধিক প্ল্যাটফর্মেও। প্রশ্ন উঠেছে, গুরুদেবকে এমন নজিরবিহীন অবমাননার পিছনে কি গেরুয়া শিবিরের প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে? চাপে পড়ে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গোচরে আনবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ।
উপাচার্য পদে প্রবীরকুমার ঘোষ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেগুলি প্রশংসিতও হয়েছে। এবার ওয়েবসাইটে আমূল বদল এনেছেন প্রবীরবাবু। আর সেটা আনতে গিয়েই নতুন বিতর্কে জড়িয়েছেন। অতীতে দেখা গিয়েছে, বিশ্বভারতীর ওয়েবসাইটে একমাত্র উপাচার্যের ছবি থাকত। অন্য কারও ছবি সেখানে ঠাঁই পেত না। তা নিয়ে কোনও আপত্তি কখনও উঠেনি। কিন্তু, এখন বদলে যাওয়া সেই ওয়েবসাইটে উপাচার্যের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যপালের ছবি! তা হলে কেন ঠাঁই পাবেন না বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর? এই প্রশ্নেই এখন তোলপাড় বোলপুর সহ গোটা নেট দুনিয়া। এর আগে হেরিটেজের ফলক থেকে সুকৌশলে নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল কবিগুরুর। তা নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। সেটা ছিল বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর জমানা।
বিশ্বজনীন শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক মিলনের আদর্শকে সামনে রেখে ১৯২১ সালে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন কবিগুরু। প্রতিষ্ঠানের মূল মন্ত্রই পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে জ্ঞান ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধন। পদাধিকার বলে দেশের রাষ্ট্রপতি হলেন বিশ্বভারতীর পরিদর্শক, প্রধানমন্ত্রী আচার্য। অন্যদিকে, রাজ্যপাল বিশ্বভারতীর প্রধান। এঁদের সবার ছবি বিশ্বভারতীর ওয়েবসাইটে জায়গা পেলে প্রতিষ্ঠাতার ছবিও স্থান পাওয়া উচিত বলে অভিমত প্রাক্তনীদের। কেননা, বিশ্বভারতীতে কেবলমাত্র ভারত নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করতে আসেন। তাঁদের কাছে কবিগুরুর প্রতি অবজ্ঞা নিয়ে ভুল বার্তা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রাক্তন ছাত্র নুরুল হক আক্ষেপের সঙ্গে এদিন বলছিলেন, ‘আমরা যেদিন ছাত্র হিসেবে এই আশ্রমে পড়াশোনা করেছি, সর্বত্র রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি অনুভব করতাম। আজ ওয়েবসাইটে তাঁর ছবি না থাকা বড্ড বেদনার।’ ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুরের কথায়, ‘বিশ্বভারতীর অস্তিত্বই রবীন্দ্রনাথের কারণে। সেখানে তাঁর ছবির অনুপস্থিতি মানে তাঁর অবদানকে আড়াল করা। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল সবাই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বিশ্বভারতী অকল্পনীয়।’