'আমার মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থাটা একটু করে দেবেন', ওসির চেম্বারে ঢুকে হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন মা, তারপর...
আজকাল | ২৫ আগস্ট ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাড়িতে বসেছে নহবতখানা, বাজছে সানাই। পাড়ায় আজ ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই রব। সকলের প্রিয় সুলেখা আজ শ্বশুরবাড়ি যাবেন। তাই সকলে দেখতে এসেছেন সুলেখার বরকে। তবে কিছুদিন আগেও দৃশ্যটা এমন ছিল না। সুলেখার বাড়ির লোক জানতেনই না কোনওদিন তাঁর বিয়ে দেওয়া যাবে বলে। আর্থিক কারণে কোথাও বিয়ে হচ্ছিল না বাবা মারা যাওয়া মেয়েটার।
তবে সুলেখার এই খবর জানার পরেই আর চুপ করে বসে থাকেননি মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সুরজিৎ হালদার। রবিবার খরগ্রামের শেরপুরে গিয়ে 'দাদা' হিসেবে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দিলেন 'বোন' সুলেখার। পাত্র-পাত্রীকে আগামী জীবনের সুখে চলার আশীর্বাদ করা ছাড়াও 'বোনে'র বিয়েতে নিমন্ত্রিত অতিথিরা যাতে পেট ভরে মাছ -মাংস- মিষ্টি- দই সহ অন্যান্য খাবার খেতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও তিনি নিজেই করে দিলেন।
সুলেখার 'দাদা' সুরজিতের উদ্যোগে এলাকার বিশিষ্ট কিছু সমাজসেবীরাও এগিয়ে এলেন এই বিয়ের আয়োজনে। তাঁরাই ব্যবস্থা করে দিলেন নতুন দম্পতির জন্য খাট, বিছানা, বালিশ সহ বিয়ের প্রয়োজনীয় যাবতীয় ছোট বড় জিনিসপত্র এবং দানের জিনিস।
খড়গ্রাম থানার শেরপুর গ্রামের বাসিন্দা সুলেখার বাবা বাসার শেখ বেশ কয়েক বছর আগেই মারা গিয়েছেন। মা ফরিদা বিবি কোনওরকমে সংসার চালান। আর্থিক অনটনের কারণে সুলেখার বিয়ের বয়স হয়ে গেলেও মা বিয়ে দিতে পারছিলেন না। একাধিক জায়গা থেকে সুলেখার বিয়ের সম্বন্ধ আসছিল। কিন্তু অর্থের অভাবে বারবার বিয়ে ভেঙে যাচ্ছিল।
শেষে কোনও উপায় না দেখে গত ২১ অগাস্ট ফরিদা সটান গিয়ে হাজির হন খড়গ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সুরজিৎ হালদারের চেম্বারে। সেখানে গিয়ে নিজের কষ্টের কথা এবং মেয়েকে বিয়ে দিতে না পারার যন্ত্রণা খুলে বলেন তিনি।
ফরিদা বিবি শেরপুর গ্রামের জেলার শেখ নাম এক পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু বিয়ে দিলে ছেলের বাড়ি এবং গ্রামের কিছু লোককে তো নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতে হবে। সেটুকু অর্থ জোগাড় করারও সামর্থ্য ছিল না ফরিদার।
শেরপুরের পরিবারটির এই সমস্যার শুনে সুলেখার 'দাদা' হিসেবে পাশে দাঁড়িয়ে এই বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেন খড়গ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক। বাড়ির লোক স্থানীয় মসজিদেই বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেও থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের উদ্যোগে রবিবার দুপুরে সুলেখার বাড়িতেই হয়েছে বিয়ের অনুষ্ঠান। কব্জি ডুবিয়ে সকলে খেয়ে তারিফ করেছেন রান্নার।
ফরিদা বলেন, 'থানার বড়বাবু আজ আমার 'ছেলে' হিসেবে পাশে দাঁড়িয়ে ছোট বোনের বিয়ে দিয়েছে।' চোখ দিয়ে নেমে আসা জলের ধারা আঁচলের কোনা দিয়ে মুছে তিনি বলেন, 'আমার মেয়ে আজ শ্বশুরবাড়ি চলে যাচ্ছে। কিন্তু আজ আমি এক ছেলেকে পেলাম।'
কর্মব্যস্ত দাদার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে সুলেখা বলেন, 'আশীর্বাদ হিসেবে দাদার কাছ থেকে চেয়েছি পরের জন্মেও তুমি যেন আমার দাদা হও এই প্রতিশ্রুতি।' তবে 'বোন'কে বিদায় দিয়ে আলাদা করে কিছু বলতে রাজি হননি থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সুরজিৎ হালদার। তিনি বলেন, 'আমার সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব ততটুকুই করেছি।'