সমুদ্র গিলছে সাগরতট! ফের ভয়াবহ ভাঙনে শঙ্কায় কপিলমুনি মন্দির
প্রতিদিন | ২৬ আগস্ট ২০২৫
সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: ফুঁসছে সাগর, ডুবছে দ্বীপ। এমনই ভয়াবহ এক পরিস্থিতির শিকার পুণ্যতীর্থ গঙ্গাসাগর। গত দু’দিনে সেই ছবি আরও প্রকট হয়েছে গঙ্গাসাগরের বেলাভূমিতে।
গঙ্গাসাগরে ভাঙন অব্যাহত। সমুদ্র ক্রমেই গিলে নিচ্ছে সাগরের তীর্থভূমিকে। গত দু’দিনের নিম্নচাপ আর অমাবস্যার ভরা কটালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গোগ্রাসে দ্বীপভূমিকে গিলছে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ। সমুদ্রসৈকতের ১ থেকে ৬ নম্বর রাস্তা গিলতে গিলতে ভয়াল সমুদ্র ক্রমশ এগিয়ে আসছে কপিলমুনির মন্দিরের দিকেই। জোয়ার এলে এখন কপিলমুনির মন্দিরের মাত্র ২৫০ থেকে ৩০০ মিটার দূরেই আছড়ে পড়ে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ। দিন যতই যাচ্ছে, সেই দূরত্ব কমছে তো কমছেই। আর আশঙ্কা তা নিয়েই। মন্দিরে আসা-যাওয়ার ১ থেকে ৬ নম্বর রাস্তা জুড়ে ভাঙন শুরু হওয়ায় আতঙ্কিত সাগরদ্বীপবাসী।
সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা রবিবার ভাঙন কবলিত সাগরতটের ১-৬ নম্বর রাস্তায় এবং শনিবার মন্দিরতলার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। মন্ত্রী জানান, পরিস্থিতি রীতিমতো চিন্তার। রাজ্য সরকার তার সীমিত সামর্থে বারবার বাঁধ মেরামতের চেষ্টা চালালেও সমুদ্রকে সেই বাঁধে রুখে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গঙ্গাসাগরে উন্নত প্রযুক্তির স্থায়ী সমুদ্রবাঁধ তৈরি না করলে সাগরদ্বীপকে রক্ষা করা একপ্রকার অসম্ভব। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহযোগিতা ছাড়া সেই উন্নত প্রযুক্তির বাঁধ নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বারবার সে কথা কেন্দ্রকে জানালেও সাগরের মতো পুণ্যভূমিকে রক্ষা করতে কেন্দ্র কোনও উচ্চবাচ্যই করছে না।” এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার সম্পূর্ণ উদাসীন বলে জানান তিনি।
গঙ্গাসাগরের তটে ১ নম্বর থেকে ৬ নম্বর রাস্তা আক্ষরিক অর্থেই অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। ১ নম্বর থেকে ২ নম্বর রাস্তায় আগেই ২৫০ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছিল। ৩ নম্বর থেকে ৫ নম্বর রাস্তা ভাঙতে ভাঙতে এখন প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা ভাঙনের কবলে। লাইটহাউস থেকে তপোবন পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে ভাঙন। সমুদ্র থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে রোপণ করা বহু ম্যানগ্রোভ বৃক্ষ ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে সমুদ্রগর্ভে। সাগরের মন্দিরতলাতেও মেরামত, বাঁধ রক্ষা করা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। সেখানেও এক কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে ভাঙন অব্যাহত। বর্তমানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভাঙন পরিস্থিতিকে আরও ভয়ানক করে তুলেছে।