• ভরদুপুরে কৃষ্ণনগরে বাড়িতে ঢুকে গুলি , কলেজ ছাত্রী খুন, ফেরার ‘প্রেমিক’
    বর্তমান | ২৬ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: ভরদুপুরে বাড়িতে ঢুকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি! নদীয়ার কৃষ্ণনগরে আইনের ছাত্রীকে খুন করে পালাল প্রেমিক। এমনকী সেই সময় সামনে চলে আসায় ছাত্রীর মাকে লক্ষ্য করেও সে দু’রাউন্ড গুলি চালায় বলে অভিযোগ। সোমবার এসপি অফিস, ডিএম অফিস, সার্কিট হাউসের প্রায় নাকের ডগায় ঘটল এমন ঘটনা। নিহত ছাত্রীর নাম ঈশিতা মল্লিক (১৯)। বাড়ি কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজ সংলগ্ন মানিকপাড়ায়। এদিন দুপুরে স্নান সেরে সবে বাথরুম থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। তখনই দোতলায় বেডরুমে ঢুকে তাঁকে গুলি করা হয়। গোটা ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। খুনের কারণ ঘিরে দানা বেঁধেছে রহস্য। ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত তথা ছাত্রীর প্রেমিক দেবরাজ সিংকে চিহ্নিত করেছে পুলিস। সে কাঁচরাপাড়া ধরমপুর এলাকা বাসিন্দা। তাকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার এসপি অমরনাথ কে বলেন, ‘আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। অভিযুক্ত যুবককে চিহ্নিত করা গিয়েছে। তার খোঁজ চলছে। মৃতা ও অভিযুক্তের মধ্যে সম্পর্ক ছিল বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করলে খুনের কারণ স্পষ্ট হবে।’ যদিও ছাত্রীর মা কুসুম মল্লিকের দাবি, ‘দেবরাজকে চিনি না।’

    জানা গিয়েছে, ঈশিতার বাবা দুলাল মল্লিক আগে বিএসএফে কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কর্মরত। স্ত্রী কুসুম ও দুই সন্তান ঈশিতা ও করণকে নিয়ে আগে কাঁচরাপাড়াতেই থাকতেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর সেখানকার কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়েই পড়াশোনা করত তাঁর ছেলে-মেয়ে। এবছর দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার পর মেয়েকে নিয়ে তাঁরা কৃষ্ণনগরের মানিকপাড়ায় চলে আসেন। কয়েকদিন আগেই একটি আইন কলেজে ভর্তির আবেদন করেছিলেন ঈশিতা। ভর্তির জন্য এদিন তাঁর সেই কলেজেই যাওয়ার কথা ছিল।

    পুলিসের অনুমান, গত তিন-চার বছর ধরে কাঁচরাপাড়ার ধরমপুরে ভাড়াবাড়িতে মা ও বোনের সঙ্গেই থাকত দেবরাজ। কাঁচরাপাড়ায় থাকাকালীনই দেবরাজের সঙ্গে ঈশিতার পরিচয়। গত তিন বছর ধরেই তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দিদির প্রেমিককে আগে থেকেই চিনত ভাই করণ। কিন্তু হঠাৎ কী এমন ঘটল, যার জন্য বাড়িতে এসে প্রেমিকাকে খুন করল দেবরাজ? অভিযুক্তের বাবা রঘুবেন্দ্র প্রতাপ সিংও বিএসএফ কর্মী। কর্মসূত্রে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে থাকেন। দেবরাজ আগ্নেয়াস্ত্র কোথা থেকে পেল, তাই ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। এদিন বীজপুর ও জেটিয়া থানার পুলিস যৌথভাবে হানা দেয় অভিযুক্তের ভাড়া বাড়িতে। যদিও সেখানে কেউ ছিল না। জানা যায়, বর্তমানে বিহারে রয়েছেন দেবরাজের মা-বোন।

    স্থানীয় সূত্রে খবর, ছেলে করণকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিলেন কুসুমদেবী। ঈশিতার জন্য রান্নাও করে রেখে গিয়েছিলেন। দুপুর ২টো নাগাদ লুকিয়ে বাড়িতে ঢোকে দেবরাজ। বাথরুম থেকে স্নান সেরে বেরতেই বেডরুমের মধ্যেই গুলি চালিয়ে খুন করা হয় ঈশিতাকে। ঠিক সেই মুহূর্তেই ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন কুসুমদেবী। তিনি বলেন, ‘আমি গেটে তালা দিয়ে যাইনি। ফিরে আসতেই অচেনা একটি ছেলেকে দেখতে পাই ঘরে। সঙ্গে সঙ্গে আমাকে লক্ষ্য করে দু’বার গুলি চালায় সে। আমরা ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজা বন্ধ দিই। ছেলেটি দরজায় ধাক্কাধাক্কিও করে। ও চলে যাওয়ার পর পাশের ঘরে গিয়ে দেখি, মেয়ে পড়ে রয়েছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে।’
  • Link to this news (বর্তমান)