বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ তছরুপ কাণ্ডে নতুন তথ্যের হদিস
আনন্দবাজার | ২৬ আগস্ট ২০২৫
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ তছরুপ কাণ্ডে নতুন তথ্যের হদিস। সিটের জিজ্ঞাসাবাদে ভক্ত মণ্ডলের বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২ কোটি টাকা অর্থ তছরুপের ঘটনায় নতুন তথ্য উঠে আসছে সিটের তদন্তে। ধৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স বিভাগের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভক্ত মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁর খণ্ডঘোষ থানার মাসিলা গ্রামের বাড়ি থেকে একাধিক ব্যাঙ্কের পাসবই, চেকবই ও গুরুত্বপূর্ণ নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
সিট সূত্রে খবর, অর্থ আত্মসাতে ভক্ত একা নন, আরও কয়েক জন জড়িত থাকতে পারেন বলে তিনি তদন্তকারীদের জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তকারীদের ধারণা, এই ঘটনার পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে। সিট হেফাজতের মেয়াদ শেষ হলে সোমবার ভক্তকে ফের বর্ধমান সিজেএম আদালতে পেশ করা হয়। তদন্তকারী অফিসার আদালতে জানান, তদন্তে অগ্রগতি ও চক্রের পর্দাফাঁসের জন্য ধৃতকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। আদালত তাঁর আবেদন মঞ্জুর করে ভক্তকে আরও তিন দিনের সিট হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
গুজরাত থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ভক্ত মণ্ডলকে। সেখানকার আদালতে পেশ করার পর ট্রানজিট রিমান্ডে তাঁকে বর্ধমানে আনা হয়। প্রথমে তাঁকে ১০ দিনের সিট হেফাজতে পাঠানো হয়েছিল। তদন্তে ভক্ত অর্থ তছরুপে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলেই দাবি সিটের।
সূত্রের খবর, বিজেপির হয়ে নির্বাচনে টিকিট পাওয়ার জন্য ভক্ত মোটা টাকা খরচ করেছিলেন। এ ছাড়া নানা জায়গায় তাঁর দেনা ছিল। পাওনাদারদের চাপ এড়াতেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা হাতানোর পরিকল্পনা করেন। দীর্ঘদিন ধরে ফিনান্স বিভাগে কাজ করায় সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত ছিলেন ভক্ত। তাঁর কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমানত প্রকল্পের শংসাপত্র থাকত। সেই সুযোগেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের সই জাল করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার চেষ্টা করেন।
২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান শহরের বিসি রোড এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক শাখা থেকে ২১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা তোলার চেষ্টা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল চিঠি নিয়ে সেখানে যান চতুর্থ শ্রেণির কর্মী শেখ এনামুল হক। নথিতে অসঙ্গতি দেখে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে জানান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও জানিয়ে দেয়, তারা কোনও আবেদন করেনি। এর পরেই ১৭ ফেব্রুয়ারি ব্যাঙ্কের সিনিয়র ম্যানেজার নেহা রানি বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সেই মামলায় এনামুলকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্ত চলাকালীন প্রকাশ্যে আসে যে শহরের স্টেশন বাজার এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা থেকে প্রায় ২ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ব্যাঙ্কের দাবি, তারা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়কে আগেই জানিয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে অর্থ তছরুপে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ভক্তের আগাম জামিন আবেদনের শুনানিতে জেলা জজ সুজয় সেনগুপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-সহ একাধিক আধিকারিকের ভূমিকা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন। বর্তমানে টাকা তোলার চেষ্টার মামলার তদন্তভার সিআইডির হাতে। সিআইডির তরফে সেই মামলায়ও ভক্তকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন জানানো হয়েছে।