সর্পাঘাতের ঘটনা সে ভাবে এড়ানো সম্ভব নয়। তবে মৃত্যু এড়ানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা প্রচারেই জোর দিচ্ছে জেলার স্বাস্থ্যভবন। এলাকায় এলাকায় সচেতনতা শিবির হচ্ছে। স্বাস্থ্যভবনের দাবি, সচেতনতা বেড়েছে। ওঝা- গুণিনের কাছে না গিয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসছেন। মৃত্যুর সংখ্যা কমছে।
চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি থেকে জুলাই) পশ্চিম মেদিনীপুরে সর্পাঘাতের শিকার হয়েছেন ২,৯৩০ জন। রোগীদের মধ্যে ‘এনভেনোমেশন’ বা শরীরে বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটেছে ৯৯৪ জনের। তাঁদের বিষাক্ত সাপে ছোবল মেরেছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। জুন পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। জুলাইতে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে আসতে দেরি হলেই বিপত্তি। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করতে না পারলে মৃত্যু হতে পারে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। এর কারণ সচেতনতা বৃদ্ধিই।’’ জেলার একাধিক হাসপাতালে ডায়ালিসিস পরিষেবা চালু রয়েছে। একাংশ রোগীর ডায়ালিসিসি করাতে হয়েছে। গ্রামীণ- চিকিৎসকদের সংগঠনের জেলা সম্পাদক দিলীপ পান জানাচ্ছেন, ছোবলের পর চিকিৎসার জন্য সময় নষ্ট কোনওমতেই নয়— এমন প্রচারে তাঁরাও শামিল হয়েছেন। দিলীপের কথায়, ‘‘কিছু এলাকায় অজ্ঞতা, কুসংস্কার ছিল। সে সব দূরীকরণে আমরাও সচেষ্ট। গ্রামবাসীকে বোঝাচ্ছি, ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।’’
গত ৭- ১৩ জুলাই, এই সময়ে সাপের ছোবলে অসুস্থ হয়েছেন ২২৮ জন। তাঁদের মধ্যে ৭৪ জনের শরীরে বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটেছে। ১৪- ২০ জুলাই অসুস্থ ২৫৪ জনের মধ্যে ৮৫ জনের শরীরে বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটেছে। ২১- ২৭ জুলাই অসুস্থ ২২৯ জনের মধ্যে ৯২ জনের শরীরে বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিষধর এবং বিষহীন সাপ, দুই ধরনের সাপই রয়েছে জেলায়। বিষধর সাপের মধ্যে রয়েছে গোখরো, চন্দ্রবোড়া, কালাচ, কেউটে প্রভৃতি। সাপ ছোবলে শরীরে বিষ প্রবেশ করায়।
সাপের বিষের একাধিক প্রকারভেদের মধ্যে একটি প্রকার হিমোটক্সিন, আরেকটি নিউরোটোক্সিন। এই জেলায় ২০২৪ সালে সাপের ছোবলে আহতদের মধ্যে ১,৫১৬ জনের শরীরে হিমোটক্সিনের উপস্থিতি দেখা গিয়েছিল। ৫৬৫ জনের নিউরোটোক্সিনের উপস্থিতি দেখা গিয়েছিল। উভয় প্রকারের উপস্থিতি দেখা গিয়েছিল ৯৮ জনের শরীরে। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত অসুস্থদের মধ্যে ৪৪৮ জনের হিমোটক্সিন, ২২৭ জনের নিউরোটক্সিন, ৩০ জনের শরীরে উভয় প্রকারের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘সাপের বিষের কবল থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারেন চিকিৎসকেরাই। তাই সময় নষ্ট না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার। সাপের ছোবল খেয়েও সঠিক সময়ে চিকিৎসা করিয়ে বেঁচে ফিরে আসা যায়।’’ মেদিনীপুরের এক সর্পবন্ধু বলছেন, ‘‘দয়া করে সাপ মারবেন না। এরা নিরীহ জীব। এদের আঘাত না করলে কোনও ক্ষতি করে না।’’