• পরিযায়ীর মৃত্যু হাবড়ায়, বিচার দাবি মায়ের
    আনন্দবাজার | ২৬ আগস্ট ২০২৫
  • মাস দুয়েক আগে মহারাষ্ট্র পুলিশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি সন্দেহে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে হাবড়ায় বাড়ি ফিরে এসেছিলেন এক পরিযায়ী শ্রমিক। তারপর থেকে দফায় দফায় অসুস্থ হয়ে ভর্তি হতে হয়েছে হাসপাতালে। রবিবার রাতে বারাসত জেলা হাসপাতালে গোলাম মণ্ডল (৫২) নামে ওই শ্রমিকের মৃত্যুতে মহারাষ্ট্র পুলিশকেই দুষছেন তাঁর বাড়ির লোক ও পড়শিরা। মহারাষ্ট্র পুলিশকে নিশানা করেছে ‘দেশ বাঁচাও গণ মঞ্চ’ও। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শ্বাসকষ্টের কারণে মৃত্যু।

    মৃতের বৃদ্ধা মা সালেদার বিবি ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ভারতের স্থায়ী বাসিন্দা। তারপরেও কেন ছেলেকে বাংলাদেশি সন্দেহে অত্যাচার করে মেরে ফেলা হবে?’’

    হাবড়ার আনোয়ারবেড়িয়ার বাসিন্দা গোলাম ২০১৩ সাল থেকে মহারাষ্ট্রে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করছিলেন। ছেলে আব্দুল হালিম, মেয়ে মর্জিনা এবং স্ত্রী আজিদাও সেখানে কাজে যান। তাঁরা মুম্বইয়ের কাছে ঠানের মীরা রোড এলাকায় একটি ঝুপড়িতে থাকতেন। গোলাম একটি আবাসন কমপ্লেক্সে কাজ করতেন। সাত মাস আগে আজিদা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ছেলেমেয়েরা ফিরে আসেন।

    পরিবারের অভিযোগ, বাংলায় কথা বলার জন্য গত ৯ জুন রাতে বাংলাদেশি সন্দেহে মহারাষ্ট্র পুলিশ গোলামকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালায়। পরিজনেরা জানান, ১৪ জুন গোলাম ছাড়া পান। ২৬ জুন অসুস্থ অবস্থায় হাবড়ায় ফেরেন। ২৮ জুন জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গোলাম হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে কয়েক দিন চিকিৎসা করিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। ‘দেশ বাঁচাও গণ মঞ্চে’র সঙ্গে যুক্ত হন। কলকাতা প্রেস ক্লাবে তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া অত্যাচারের কথা জানিয়েছিলেন। শনিবার ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রবিবার বারাসত জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

    গোলামের ভাই মনিজুলের অভিযোগ, ‘‘দাদাকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়ে একটি ক্যাম্পে আরও কয়েক জনের সঙ্গে আটকে রেখেছিল। মারধর করা হয়েছিল। ফ্রিজের ঠান্ডা জল, সিঙাড়া এবং ভাত খেতে দেওয়া হত।’’ মৃতের ছেলের অভিযোগ, ‘‘বাবা আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড-সহ যাবতীয় পরিচয়পত্র দেখালেও ওখানকার পুলিশ তা দেখতে চায়নি।’’

    সোমবার ‘দেশ বাঁচাও গণ মঞ্চে’র পাঁচ সদস্য গোলামের বাড়িতে আসেন। মঞ্চের সদস্য সুমন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গোলাম এ রাজ্যের প্রথম ‘পরিযায়ী শহিদ’। যাকে বিজেপি সরকার খুন করেছে। মহারাষ্ট্র পুলিশের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করতে পারি।’’ মঞ্চের আর এক সদস্য, সঙ্গীতশিল্পী সৈকত মিত্র বলেন, ‘‘অত্যাচারের কথা গোলাম নিজে বলে গিয়েছেন। রোদে দীর্ঘদিন সময় দাঁড় করিয়ে ঠান্ডা জল খাইয়ে অত্যাচার করা হয়েছে। পুলিশের নির্যাতনের ফলেই একজনের প্রাণ গেল।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)