পূর্ব-পশ্চিম মেট্রোপথে যাত্রী কমার আশঙ্কায় প্রায় সাতশো বাস
আনন্দবাজার | ২৬ আগস্ট ২০২৫
পশ্চিমে হাওড়া ময়দান থেকে পূর্বে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার পথ মেট্রোর মাধ্যমে জুড়ে যেতেই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে সরকারি এবং বেসরকারি বাস পরিষেবার ক্ষেত্রে। হাওড়া, শিয়ালদহ এবং ধর্মতলার মতো ব্যস্ত এলাকা দিয়ে যাতায়াত করে, এমন প্রায় ৭০০ বেসরকারি বাস দৈনিক যাত্রী পরিবহণ সংখ্যায় বড়সড় প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছে। বেসরকারি বাসমালিকদের বড় অংশই জানাচ্ছেন, আজ, সোমবার সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন থেকেই তাঁদের কার্যত পরীক্ষা শুরু। আগামী এক সপ্তাহ যাত্রীদের সফরের ধরন দেখে তাঁদের ধরে রাখার কৌশলে অদলবদল করতে হতে পারে বলেও জানাচ্ছেন মালিকদের অনেকে।
বাসমালিকদের কথায়, বেসরকারি বাসের একাধিক রুটের অন্তত ৪০-৫০ শতাংশ, কিছু ক্ষেত্রে তারও বেশি অংশ চলে আসছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর রুটের আওতায়। ফলে চালক ও কন্ডাক্টরদের একাংশের অনুমান, এত দিন যে ভাবে তাঁরা যাত্রী পেয়ে এসেছেন, সেই ছবিটা না-ও ফিরতে পারে। সংশ্লিষ্ট বাস রুটের যতটা মেট্রোর বাইরে, ততটুকু অংশেই কিছু যাত্রী পাওয়ার আশা করছেন তাঁরা। তবে, সেখানেও কিছু ক্ষেত্রে অটোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা বাড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা।
এত দিন হাওড়া থেকে শিয়ালদহ ছাড়াও শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলার মধ্যে চলে, এমন বাস ফাঁকা থাকাই ছিল প্রায় বিরল। ঘটনাচক্রে, গত শুক্রবার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর শিয়ালদহ থেকে এসপ্লানেড পথে পরিষেবার উদ্বোধন হওয়ার পরে প্রথম তিন দিনেই সেই ভিড়ে ভাঙন ধরতে শুরু করেছে। শিয়ালদহ থেকে মহাত্মা গান্ধী রোড দিয়ে বিভিন্ন রুটের প্রায় শ’চারেক বাস চলে। যার মধ্যে ৭১, ৭২, ৪৪, ৪৪এ, ২৮ নম্বর রুটের বাস ছাড়াও রয়েছে ফুলবাগান-হাওড়া মিনিবাস।
ওই সব বাসের মধ্যে ৭১ নম্বর রুটের বাস হাওড়া ময়দান থেকে হাওড়া স্টেশন, বড়বাজার, কলেজ স্ট্রিট হয়ে শিয়ালদহ, রাজাবাজার পর্যন্ত চলত। যদিও ওই বাসের পারমিট আছে সল্টলেক পর্যন্ত। একই ভাবে, ৭২ নম্বর রুটের বাস ডুমুরজলা থেকে পার্ক সার্কাস, ৪৪ এবং ৪৪এ রুটের বাস হাওড়া স্টেশন, মহাত্মা গান্ধী রোড হয়ে শিয়ালদহ কোর্ট, ফুলবাগান, বেলেঘাটা, উল্টোডাঙা হয়ে সল্টলেক পর্যন্ত যায়।
এ ছাড়া, ২১৫এ হাওড়া থেকে নবদিগন্ত রুটে এবং ২৩৯ ও ২৩৯এ বাবুঘাট থেকে বিকাশ ভবন, সাপুরজি রুটে চলাচল করে। সব মিলিয়ে প্রায় সাতশো বেসরকারি বাস রুট মেট্রোর পরিসরের মধ্যে পড়ছে বলে খবর। সেই সঙ্গে হাওড়া-শিয়ালদহ মিডি-১ এবং হাওড়া স্টেশন-সাপুরজি রুটে এসি-১২ ও এসি-১২এ রুটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর আওতায় এসেছে। এত দিন সরকারি বাসের ক্ষেত্রে এসি-১২ এবং এসি-১২এ অন্যতম প্রধান লাভজনক রুট হিসেবে বিবেচিত হত। কিন্তু, ওই রুট নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে রাজ্য পরিবহণ নিগমের কর্তাদের কপালেও।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিগমের কর্তারা মূলত মালপত্র নিয়ে পুরো রুটে সফর করা যাত্রী এবং শিয়ালদহে প্রতিদিন আসা খুচরো ব্যবসায়ীদের উপরে আস্থা রাখতে চাইছেন। অন্য দিকে, বেসরকারি বাসমালিকেরা মেট্রো রুটের বাইরে ছড়িয়ে থাকা অংশ থেকে যাত্রী তোলার উপরে জোর দিচ্ছেন বেশি। এই সম্পর্কে বাসপ্রেমী সংগঠন ‘কলকাতা বাস ও পিডিয়া’র অন্যতম প্রধান সংগঠক অনিকেত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেট্রোর সংযুক্তি সড়কপথে সফরের ক্ষেত্রে বিপুল বদল আনবে। ওই বদল আমরা নজরে রাখছি।’’ বাসমালিক সংগঠন ‘সিটি সাবার্বান সার্ভিস’-এর সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘আপাতত সুষ্ঠু পরিষেবায় জোর দিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা।’’