নয়া মেট্রো টেনে নিচ্ছে বহু যাত্রী, চিন্তায় বাসকর্মীরা
আনন্দবাজার | ২৬ আগস্ট ২০২৫
এ যেন মাথা উঁচিয়ে জেগে ওঠা শপিং মলের কাছে পাড়ারমুদিখানার জমি হারানো! শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষায় যে যাত্রীদের ভরসা ছিলহাওড়া-ফুলবাগান মিনিবাস এবং ৭১, ৭২, ৪৪ আর ৪৪-এ রুটের বাস, তাঁরাই এখন শিয়ালদহে পৌঁছতে বাসের বদলে মেট্রোকে বেছেনিচ্ছেন। এমনকি, বেসরকারি সংস্থার অ্যাপ-নির্ভর বাতানুকূল বাস পরিষেবাও ফিরিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। পাঁচ নম্বর সেক্টরে যেতে মেট্রোকেই বেছে নিচ্ছেন নানাবয়সের ওই যাত্রীরা। মেট্রোর মসৃণ গতি এবং স্বাচ্ছন্দ্যের কাছে হারমানছে বেসরকারি অ্যাপ-নির্ভর সংস্থার বাসও। অনেক কম খরচে এবং মাত্র ২০ মিনিটে সল্টলেকেরসেক্টর-৫ থেকে এসপ্লানেড কিংবা আধ ঘণ্টায় হাওড়া ময়দানে পৌঁছনোরজন্য এর চেয়ে ভাল বিকল্প তাঁদের কাছে আর নেই। যাঁরা ওই সবঅ্যাপ-নির্ভর বাসে চেপে বাড়ি ফিরতেন, তাঁদের কাছেও রাতারাতি আপন হয়ে উঠেছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো।
মহাত্মা গান্ধী রোড কিংবা স্ট্র্যান্ড রোড ধরে শিয়ালদহ বা ধর্মতলামুখী যে সমস্ত বাস অন্যান্য দিন যাত্রী ধরতে রেষারেষি করত, সোমবার যাত্রী কম থাকায় ওই সব বাসের চালক ও কন্ডাক্টরদেরহা-পিত্যেশ করতে হয়েছে। শহরের গলিঘুঁজি যাঁরা ভাল চেনেন না, সঙ্গে থাকা ভারী মালপত্র নিয়ে যাঁরা বার বার ওঠানামা করতে নারাজ, একমাত্র সেই যাত্রীদের একাংশই এখনও বাসে ভরসা রাখছেন। পাঁচ নম্বরসেক্টরমুখী অ্যাপ-নির্ভর বাসের যাত্রীতেও ভাটার টান।
গোটা পথে মেট্রো পরিষেবা শুরু হলে যাত্রী হারানোর আশঙ্কায়সরকারি বাসের এ সি-১২ রুট বেশ কিছু দিন ধরেই নড়বড়ে। হাওড়া থেকে বি বা দী বাগ, পার্ক স্ট্রিট, সল্টলেক হয়ে শাপুরজিগামী বাতানুকূল বাসেও মাঝের পথে যাত্রীকমেছে। রুটের পুরোটাই সফর করবেন, এমন যাত্রীদের একাংশ ভরসা রাখলেও যে সব যাত্রী সল্টলেক পর্যন্ত যেতেন, তাঁদের সংখ্যা কমেছে।তাতে বাসের ভিড় পাতলা হওয়ার মুখে। একমাত্র নিউ টাউনের ডিএলএফ, ইউনিটেক মোড় সংলগ্ন এলাকার যাত্রীদের বড় অংশইএখনও বাসের উপরে নির্ভরশীল। তবে, নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর পথে মেট্রো চালু হলে ওই অংশেরযাত্রীর ভিড়ও মেট্রোয় চলে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ দিন আক্ষেপ করে এক বাসকর্মী বললেন, ‘‘রুটের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পথ মেট্রো এলাকায় ঢুকে পড়লে আর কী থাকে? বাকিটুকু নিয়ে ব্যবসা চালানো মুশকিল।’’
মেট্রোর প্রভাব পড়েছে পথচারীদের ভিড়েও। শিয়ালদহ ট্র্যাফিক গার্ডের এক সার্জেন্ট বললেন, ‘‘সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত পথচারীদের রাস্তা পারাপারের চাপে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে যায়। ওই সময়েই যানজট বাড়ে। এ দিন সেই ভিড় অনেকটা কম চোখেপড়েছে।’’ শহরের গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ফিডার রুটে বাস চালানোই এখন একমাত্র সমাধান। পরিবহণদফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পরিবহণ বাস্তুতন্ত্রে মেট্রো, বাস, অটো একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠলে খুব মুশকিল।ভারসাম্য তখনই আসবে, যখন প্রত্যেকে পিরামিডের নির্দিষ্ট স্তরে থাকবে।’’