শৈশবেই মা-বাবার বিচ্ছেদ, ১০ বছর পর সেই বাবার খোঁজে ভাতার থেকে হরিয়ানায় পাড়ি ছেলের
প্রতিদিন | ২৬ আগস্ট ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার, কাটোয়া: বাবা ও মায়ের মধ্যে অশান্তি। তার জেরে বিচ্ছেদ। মাত্র চারবছর বয়সেই বাবাকে ছেড়ে হরিয়ানা থেকে মায়ের সঙ্গে চলে আসতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু শৈশবের স্মৃতি আবছা হয়ে এলেও ‘নিজের’ বাবার কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা মনের মধ্যে পুষে রেখেছিল ১৪ বছরের কিশোর। তাই সুযোগ পেয়েই বাড়ি থেকে পালিয়ে একাই হরিয়ানায় পৌঁছে গিয়েছিল ভাতার থানা এলাকার বাসিন্দা ওই কিশোর। প্রায় দু’সপ্তাহ পর তাকে হরিয়ানা থেকে উদ্ধার করল ভাতার থানার পুলিশ।
ভাতারের এরুয়ার গ্রামে বাপের বাড়ি ওই বধূর। হরিয়ানায় তাঁদের বাপের বাড়ির সম্পর্কে এক আত্মীয় থাকেন। সেই সূত্রেই প্রায় ১৭ বছর আগে হরিয়ানার পানিপথ জেলার সামালকা এলাকায় বিয়ে হয়েছিল। দম্পতির তিন সন্তান। কিন্তু বধূর সঙ্গে স্বামীর অশান্তি চরমে পৌঁছায়। সৃষ্টি হয়। চরম আকার নিয়ে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। প্রায় ১০ বছর আগে তিন পুত্রকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে আসেন বধূ। ছেলেদের নিয়ে আলাদা থাকতেন। প্রথম স্বামীকে ছেড়ে আসার বছর দুয়েকের মধ্যেই ফের বিয়ে করেন বধূ। ১৪ বছরের ওই কিশোর মেজ। বড়বেলুন গ্রামে একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছিল।
অসুস্থতার জন্য মাদ্রাসা থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে আসে কিশোর। তারপর ফের মাদ্রাসায় যাওয়ার কথা। এর মধ্যেই গত ১২ আগস্ট বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে ভাতার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। নিখোঁজের অভিযোগ পেয়েই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। কিন্তু কোনও ‘ক্লু’ পাচ্ছিলেন না পুলিশ আধিকারিকরা।
এরপর মাদ্রাসায় গিয়ে পড়ুয়ার সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে হরিয়ানা যোগের সূত্র খুঁজে পান। যদিও নিজের অতীত জীবনের কথা পুলিশের কাছে প্রথমে জানাতে চাননি নাবালকের মা। স্থানীয় এলাকা থেকে পুলিশ মহিলার পারিবারিক ইতিহাস জানে। তারপর হরিয়ানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভাতার থানার পুলিশ জানতে পারে ওই নাবালক রয়েছে তার বাবার কাছে। এরপর ভাতার থানার পুলিশের একটি দল হরিয়ানায় গিয়ে উদ্ধার করে নাবালককে। সোমবার বিকেলে তাকে ভাতারে নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার শিশু সুরক্ষা আদালতে পাঠানো হবে বলে জানা গিয়েছে।
নাবালক পুলিশের কাছে জানায় সৎবাবাকে তার পছন্দ নয়। নিজের বাবার কাছে থাকার ইচ্ছা মনের মধ্যে অনেক আগে থেকেই পুষে রেখেছিল। গত ১২ আগস্ট বলগোনা থেকে ট্রেন ধরে বর্ধমান যায়। তারপর হরিয়ানার ট্রেন ধরে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় নিজের আধারকার্ড ও ১৪০০ টাকা সঙ্গে নিয়েছিল। পানিপথ স্টেশনে নামার পর তাকে রেলপুলিশ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখনই নিজের বাবার নাম ও ঠিকানা জানায়। আধার কার্ড দেখায়। তাই পুলিশ আর সন্দেহ করেনি। নাবালক অবশ্য বলে, “বাবা এখনও আমাদের খুব ভালোবাসে। বড় হলে আবার বাবার সঙ্গে দেখা করতে হরিয়ানায় যাব।”