‘দেড়শো গ্রাম বীর্য’ তত্ত্ব ছড়িয়েছিলেন, সেই চিকিৎসক সুর্বণ গোস্বামীকে বেআইনি মিছিলের অভিযোগে নোটিস পুলিশের
প্রতিদিন | ২৭ আগস্ট ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার: আরজিকর কান্ডে নির্যাতিতার শরীরে দেড়শো গ্রাম বীর্য পাওয়া গিয়েছে বলে বিস্ফোরক দাবি করে জনমানসে বিভ্রান্তি ছড়ানো ডাঃ সুর্বণ গোস্বামীকে এবার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগে নোটিস পাঠাল কলকাতা পুলিশ। আরজিকর কাণ্ডের পর ডাঃ গোস্বামীদের উদ্যোগে পুলিশের অনুমতি ছাড়া ২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলের আয়োজন করেছিলেন বাম-অতিবাম ও গেরুয়াপন্থী চিকিৎসকরা। পুলিশের দাবি, “আইন অনুযায়ী অনুমতি ছাড়া শহরের রাস্তায় মিছিল করা যায় না। এতে সাধারণ মানুষের চলাচল ও জনজীবন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলার অবনতির সম্ভাবনাও থাকে। তাই পুলিশের অনুমতি ছাড়া ওইদিন মিছিল করায় আইনভঙ্গের অভিযোগে এই নোটিস দেওয়া হয়েছে।’’
মঙ্গলবার পুলিশ ডাঃ গোস্বামীর পাশাপাশি ডাঃ মানস গুমটাকেও একই ধারায় নোটিস দিয়েছে। আগামী ২ সেপ্টেম্বর ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী এবং ডাঃ মানস গুমটাকে পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর বউবাজার থানায় হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নোটিস মেনে নির্দিষ্ট দিনে হাজিরা না দিলে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। রাত পর্যন্ত ডাঃ গোস্বামীর কোনও বক্তব্য না পাওয়া গেলেও ডাঃ গুমটা এদিন পাল্টা অভিযোগ করেন, ‘‘একবছর আগের মিছিল নিয়ে এমন নোটিস স্রেফ হেনস্তা করা এবং ভয় দেখানোর জন্য করা হয়েছে। বাকিটা আইনজীবী ও সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ নেব।’’ এ ব্যাপারে এদিন সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন,‘‘বেআইনি জমায়েত, বেআইনি পদক্ষেপ নিলে আর তা যদি সাধারণ মানুষের জন্য ভোগান্তি হয় তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা ব্যবস্থা নেবেন। এটাই স্বাভাবিক।’’
ময়নাতদন্তের ‘গোপন-সূত্র’ উল্লেখ করে ডাঃ গোস্বামীর দেড়শো গ্রাম বীর্যের তত্ত্ব সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা করতে গিয়ে তিনি দাবি করেছিলেন, অভয়ার শরীরে গণধর্ষনের জেরে ১৫০ গ্রাম বীর্য পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু কলকাতার নামী স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা তখন পালটা তথ্য দিয়ে জানিয়ে দেন, কোনও নারীর শরীরে দেড়শো গ্রাম বীর্য একত্রিত হতে হলে পরপর কমপক্ষে ৩০ জন পুরুষের ধর্ষণ হতে হবে। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানে বীর্য পরিমাপ করা হয় মিলিলিটারে, কখনই গ্রামে হিসাব হয় না। যদিও সিবিআই তদন্তের চার্জশিট ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আদালতে জানিয়েছিল, মাত্র একজনই ধর্ষক ছিল। বস্তুত এই রিপোর্টকে হাতিয়ার করেই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া সঞ্জয় রাইকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে বিশেষ আদালত।
কিন্তু রাম-বাম সমর্থক এই ‘বিচিত্রবীর্য’ গোস্বামীরা তখন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা করতে ১৫০ গ্রাম বীর্যের বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিলেন। পাল্টা চিকিৎসা জগতের বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট মহল প্রশ্ন তোলে, একজন সিনিয়র চিকিৎসক হয়েও কেন সেদিন ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী অভয়ার শরীরে দেড়শো গ্রাম বীর্যের প্রাপ্তির ‘গালগল্প’ ছড়ালেন? কেন মিলিলিটারে বীর্য পরিমাপ করার বিষয়টি হঠাৎ করে দেড়শো গ্রামে উল্লেখ করেন। যদিও বিপাকে পড়ে পরে ডাঃ গোস্বামী এই দেড়শো গ্রাম বীর্য প্রাপ্তির দাবি অস্বীকার করেন।