• দাদাঠাকুর শরৎ পণ্ডিতের মামাবাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয় এক পক্ষকাল আগে
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: দুর্গাপুজো শুরু হওয়ার প্রায় ১৫ দিন আগে থেকে বোধনের আচার-অনুষ্ঠান শুরু হয়। এটি একটি প্রাচীন রীতি, যেখানে ষষ্ঠীর আগেই দুর্গার আরাধনা শুরু হয়। নির্দিষ্ট কয়েকটি পরিবারে ও গ্রামে এখনও এই প্রথা দেখা যায়। যেমন নলহাটির সিমলান্দী গ্রামের ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো। এই পরিবারটি ‘দাদাঠাকুর’ শরৎ পণ্ডিতের মামার বাড়ি। আজও দাদাঠাকুরের ‘ঈশান প্রেস’ এই বাড়িতে সংরক্ষিত। ভট্টাচার্য বাড়িতে কৃষ্ণপক্ষ থেকেই শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুজো।  

    এই পুজো আগে রায় পরিবারের পুজো হিসেবে পরিচিত ছিল। পুজোর সূচনা করেন তৎকালীন জমিদার রামতারণ রায়। তিনি এখানে এস্টেট চালাতেন। এক হাজারেরও বেশি জমি ও পুষ্করিনী ছিল তাঁর নামে। সেই সময়ে ষষ্ঠীর ১৫ দিন আগে কৃষ্ণপক্ষ থেকে দেবীর আহ্বানে প্রজারা মেতে উঠতেন। তখন গ্রামে আলাদা করে কোনও পুজো হতো না। তাই প্রজাদের আনন্দদানে তিনি আগেভাগেই মাটির মন্দির নির্মাণ করে দুর্গাপুজো শুরু করেন। বর্তমানে পাকা মন্দির হয়েছে। জমিদার বংশের লীলা পুকুরে ঘট ভরে পুজো শুরু হয়। প্রাচীন রীতি মেনে ঘট ভরার আগে পুকুরপাড়ে লালপাড় শাড়ি পরা এক সধবা মহিলাকে কাঁখে কলসি নিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তারপর গ্রামের মহিলারা আগে আগে জলের ধারা দিয়ে ওই সধবাকে মণ্ডপে নিয়ে যান। সেখানে ভট্টাচার্য পরিবারের মহিলারা ওই সধবাকে বরণ করে নেন। সেই কলসি প্রতিষ্ঠা করে ঘটপুজো শুরু হয়। ওইদিন একটি ছাগ বলি দেওয়া হয়। তৃতীয়া পর্যন্ত ঘট পুজোর পাশাপাশি চলে চণ্ডীপাঠ। 

    মহালয়ার দিন মৃন্ময়ী দেবীমূর্তির চক্ষুদানের পর চতুর্থী থেকে দশমী পর্যন্ত পুজো নিবেদন করা হয়। সপ্তমী থেকে নবমী চলে ছাগ বলি। সেই সঙ্গে চারদিন ধরে ফের চণ্ডীপাঠ। গ্রামের মহিলারা উপবাস থাকেন। বলিদানের রক্তমাখা খড়গ নিয়ে গোটা গ্রাম প্রদক্ষিণ করা হয়। খড়গ দেখেই উপবাস ভাঙেন মহিলারা। তবে জৌলুস কমে এলেও পূর্বপুরুষদের প্রতিষ্ঠিত পুজোও আজও নিষ্ঠার সঙ্গে চালিয়ে আসছে তাঁরা। 

    জানা গিয়েছে, শরৎচন্দ্র পণ্ডিত ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ এপ্রিল এই মামার বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অতি শৈশবেই পিতৃ-মাতৃহারা হন। ফলে মামার বাড়ির প্রতি তাঁর টান অন্যরকম ছিল। প্রতিবছর পুজোতে তাঁর ঠিকানা হয়ে উঠত এই মামাবাড়ি। 

    বর্তমান বংশধর অরিন্দম ভট্টাচার্য বলেন, পরিবারের পঞ্চম পুরুষ ক্ষীরোদ রায়ের চার মেয়ে। মেজ মেয়ে সুধারানি রায়কে তিনি পুজোর দায়িত্ব দিয়ে যান। পরে সুধারানি দেবীর বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর থেকে এই পুজো ভট্টাচার্য পরিবারের পুজো হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। ক্ষীরোদ রায়ের পিসির ছেলে দাদাঠাকুর। আজও দাদাঠাকুরের  ঈশান প্রেস প্রাচীন তিনতলা মাটির বাড়িতে সংরক্ষিত রয়েছে। তিনি বলেন, বাপ-ঠাকুরদার থেকে শোনা, একটা সময়ে পুজোয় প্রচুর ধূমধাম হতো। এখন আর সেই জৌলুস নেই। আগে প্রচুর মানুষকে পাত পেরে অন্নভোগ খাওয়ানো হতো। এখন অর্থাভাব সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি অনুদান মিললে হয়তো দাদাঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত এই পুজো জৌলুস ফিরে পাবে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)