• শান্তিনিকেতনে উপাসনা গৃহের সামনের রাস্তা হস্তান্তরের দাবিতে ভীত বাসিন্দারা
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: শান্তিনিকেতনের উপাসনা গৃহ সংলগ্ন রাজ্য সরকারের রাস্তা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে বিশ্বভারতী। এতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন এলাকার বাসিন্দারা। রাজ্য সরকার সদয় হয়ে বিশ্বভারতীকে সেই রাস্তার নিয়ন্ত্রণের অধিকার দিলে ফের স্বেচ্ছাচারিতার আশঙ্কা করছেন সেখানকার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, ইউনেস্কোর হেরিটেজ স্বীকৃতি সারা পশ্চিমবঙ্গের গর্ব। তবে হেরিটেজ রক্ষার্থে ওই রাস্তার নিয়ন্ত্রণ জেলা প্রশাসনের হাতেই থাকুক। কারণ অতীতে, প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর স্বেচ্ছাচারিতায় ওই রাস্তায় চলাচলে নাজেহাল হতে হয়েছিল এলাকার বাসিন্দাদের। এছাড়া নতুন উপাচার্য আসার পর থেকে বাফার জোনে অবস্থিত বাসিন্দাদের সঙ্গে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এবিষয়ে কোনও বৈঠকও হয়নি। তাই বাসিন্দাদের মতামত নেওয়া দরকার বলে মনে করছেন অনেকে। 

    উপাসনা গৃহ সংলগ্ন রাস্তাটি আগে রাজ্য সরকারের দখলেই ছিল। তবে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তরের আবেদন করেছিলেন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন দত্ত। বিশ্বভারতীকে নিরাশ করেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৭ সালে তিনি তা বিশ্বভারতীর হাতে তুলে দেন। কিন্তু, প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎবাবুর সময় এই রাস্তায় চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্বভারতী। তাতে বিড়ম্বনায় পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। এরপর এলাকার বাসিন্দারা মুখ্যমন্ত্রীকে এবিষয়ে অবহিত করতেই তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। এরপর ২০২০সালে রাস্তাটি ফের রাজ্য নিজেদের দখলে নেয়। তারপর থেকে রাস্তাটি রাজ্য সরকারের অধীনেই রয়েছে। 

    তবে ইউনেস্কোর হেরিটেজ স্বীকৃতি পাওয়ার পর রাস্তায় যেভাবে ভিড় ও বিশৃঙ্খলা বাড়ছে তাতে মর্যাদা খোয়ানোর আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। তার প্রেক্ষিতে সোমবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে হেরিটেজ সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক করে বিশ্বভারতী। সেই বৈঠকে কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের কাছে ওই রাস্তা হস্তান্তরের আবেদন জানায়। কর্তৃপক্ষের দাবি, হেরিটেজ মর্যাদা ধরে রাখতে ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার স্বার্থে রাস্তাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা জরুরি। যদিও এলাকার বাসিন্দারা তাতে সহমত নন। ওই রাস্তাতেই রয়েছে প্রবীণ আশ্রমিক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের ভাই শান্তভানু সেনের বাড়ি। তাঁরা বলেন, বিদ্যুৎবাবুর আমলে উপাসনা গৃহে অনুষ্ঠান চলাকালীন ওই রাস্তায় সবরকম যান চলাচল বন্ধ করে দিত কর্তৃপক্ষ। এতে হাসপাতাল বা জরুরি কাজেও ঘুরপথে যাতায়াত করতে হতো। তাই নতুন করে বিড়ম্বনায় পড়তে চাই না। আমরা হেরিটেজ বাফার জোনে বসবাস করি। হেরিটেজের বিষয়ে বিশ্বভারতী এখনও কোনও বৈঠকে আমাদের ডাকেনি। আমরা চাই মিলিতভাবে সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। তাতে সবার ভালো হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, আমরা সবেমাত্র জেলা প্রশাসনকে রাস্তা হস্তান্তরের আবেদন জানিয়েছি। হেরিটেজ স্বীকৃতি তো শান্তিনিকেতনের গর্ব। এই মর্যাদা রক্ষা করা শুধু বিশ্বভারতীর দায় নয়। এটা সকলেরই কর্তব্য। তাই শান্তিনিকেতন ও বোলপুরের বাসিন্দাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে। ‌বাকি যা সমস্যা তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে।   শান্তিনিকেতনের উপাসনার গৃহ সংলগ্ন এই রাস্তা নিয়েই চিন্তা বাড়ছে। - নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)