মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পেলেন বাড়ি তৈরির অনুদানের চেক, চোখে জল পিয়ারতের
বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৫
সংবাদদাতা, কাটোয়া: ২০২১ সালে যশ ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে গিয়েছিল আউশগ্রামের বিল্বগ্রামে পিয়ারত শেখের মাটির বাড়ি। ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল পুরো পরিবার। তারপর থেকে পাঁচ বছর ধরে পরিত্যক্ত অঙ্গনওয়াড়িই আস্তানা হয়ে উঠেছিল বৃদ্ধ দম্পতির। বয়সের ভারে কাজ করার শক্তি হারিয়েছেন তাঁরা। ভিক্ষে করে, বিড়ি বেঁধে কোনওরকমে চলে সংসার। প্রশাসনের দরজায় ঘুরেও বাংলার বাড়ি পাননি। একাধিকবার প্রশাসনের লোকজন পরিদর্শন করতে গিয়েছেন তাঁর অবস্থা। তবুও আবাস তালিকায় ওই বৃদ্ধ দম্পতির নাম ওঠেনি। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পাকা বাড়ি তৈরির জন্য অনুদান পেলেন আউশগ্রামের সেই পিয়ারত শেখ।
এদিন বর্ধমানের সভা থেকে পিয়ারত শেখকে বাড়ি তৈরির সুবিধা প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিল থেকে তাঁকে এই টাকা দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে পাকা বাড়ি তৈরির চেক পেয়ে চোখে জল নিয়ে পিয়ারত বলেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর অবদান কোনওদিন ভুলব না।
আউশগ্রামের জঙ্গলমহলের দুঃস্থ দম্পতির ভাগ্যে কোনওদিন শিকে ছেঁড়েনি। যশ ঝড়ে বহু মাটির বাড়ি ভেঙেছিল। আউশগ্রাম-১ ব্লকের বিল্বগ্রামের মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা পিয়ারত শেখের চার কামরার মাটির বাড়িও সেই ঝড়ে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল। সে সময়ে প্রশাসন তড়িঘড়ি তাঁদের উদ্ধার করে গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে আশ্রয় দিয়েছিল। ব্যস সেই থেকেই কার্যত পিয়ারত শেখের আস্তানা হয়ে দাঁড়াল ওই পরিত্যক্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। তারপর স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে দু’ বার ত্রিপল মিললেও পাকা ছাদ মেলেনি। এ নিয়ে ‘বর্তমান’ খবরের কাগজে দু’ বার প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিল। এদিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে বাড়ি তৈরির চেক পেয়ে খুব খুশি গোটা জঙ্গলমহল।
পিয়ারত শেখ বলেন, আমি গরিব মানুষ। কাজ করতে পারি না। আমার স্ত্রী ভিক্ষা করে। আর অবসর সময়ে বিড়ি বেঁধে সংসার চলে। ভাঙা ঘর মেরামত করার সামর্থ আমাদের ছিল না৷ তাই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রই আমাদের মাথা গোঁজার ঠাই হয়েছিল। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটির অবস্থাও ভালো নয়। বৃষ্টিতে ছাঁদ চুঁয়ে জল পড়ে। ঘরের ভিতর বাসা বেধেছে বিষধর সাপ। প্রাণ হাতে নিয়েই পিয়ারত শেখকে কোনওরকম মাথা গুঁজে কাটাতে হতো। পিয়ারত শেখ ও তাঁর স্ত্রী রসুলা বিবির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে আমিনা খাতুন ও ছোট মেয়ে সামিনা খাতুন। দু’ জনেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আমিনার গ্রামেই বিয়ে হয়েছে। কিন্তু তাঁর স্বামী অসুস্থ। বর্ধমানে তাঁকে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে হয়। আমিনা বলেন, আমরা ছিটেবেড়া দেওয়া ঘরে বাস করি। তাছাড়া আমার স্বামীও কাজ করতে পারেন না। বাবা-মার সংসার টানার সামর্থ আমারও নেই। খুব কষ্টেই ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রতে তাঁরা রয়েছেন। তবে ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের নতুন ভবন তৈরি হওয়ায় সেখানেই পড়াশোনা রান্নাবান্না চলে।
এদিন বিল্বগ্রাম অঞ্চলের প্রধান কিশোর রায়চৌধুরী বলেন, পিয়ারত শেখকে বাড়ি তৈরির চেক দিয়ে দিদি প্রমাণ করলেন, গরিবের কথা তিনিই ভাবেন। একই কথা বলেন আউশগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাপস চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আউশগ্রামে পিয়ারতের সঙ্গে আরেকজনকেও বাড়ি তৈরির চেক প্রদান করা হয়।
রসুলা বিবি বলেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। আমাদের মতো অসহায়দের কথা যে তিনি ভেবেছেন, তারজন্য আমরাও খুশি। ঘরের জন্য বহু জায়গায় দরবার করেছিলাম। কোথাও সেভাবে সাহায্যে পাইনি। আমাদের দিদি না থাকলে হয়তো ভেসে যেতাম।