এই সময়: রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রভোট দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা নিয়ে এত দিন রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। কলকাতা হাইকোর্টও একাধিকবার এ নিয়ে রাজ্যের কৈফিয়ত তলব করেছে। তবে এ বার এই ছাত্রভোট না-হওয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপরেই চাপিয়ে দিল রাজ্য।
মঙ্গলবার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং ও ছাত্রভোট সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, 'ভোট ও অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটি না-হওয়ার দায় পুরোটাই সংশ্লিষ্ট কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। কারণ, এই নির্দেশ কার্যকর করা তাদেরই দায়িত্ব। এখানে রাজ্যের কোনও ভূমিকা নেই।'
সেই সূত্রে ছাত্রভোট না-হওয়ার দায় নিতে অস্বীকার করেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের আইনজীবীর প্রশ্ন, কেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে মামলায় যুক্ত না-করে শুধু রাজ্যকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে?
এ দিন হাইকোর্টের বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি স্মিতা দাস দের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য রাজ্যের এই দাবি আদালতের রায়ে রেকর্ড করার পক্ষে সওয়াল করেন। তাঁর যুক্তি, 'ভোট করানোর ক্ষেত্রে রাজ্যের যদি কোনও এক্তিয়ারই না-থাকে, তা হলে উচ্চশিক্ষা দপ্তর বিজ্ঞপ্তি জারি করে কী ভাবে নির্বাচন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়?'
বিকাশের অভিযোগ, 'রাজ্য সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ভোট বন্ধ করে সেখানে দলীয় ক্ষমতা কায়েম করে রেখেছে।' এর পরেই ডিভিশন বেঞ্চ মামলাকারী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। আদালত জানিয়েছে, ১০ নভেম্বর ভোট ও র্যাগিং ইস্যুতে মামলাগুলির পৃথক শুনানি হবে।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটি তৈরি এবং ছাত্রভোট না-হওয়া নিয়ে অনেকগুলি মামলা বিচারাধীন। দক্ষিণ কলকাতার আইন কলেজের ছাত্রীর শধর্ষণের ঘটনার পরে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়। আদালত নির্দেশ দেয়, হত দিন না ছাত্রভোট হচ্ছে, তত দিন এই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ইউনিয়ন জমগুলি তালাবন্ধ রাখতে হবে। সেই নির্দেশের কিছুদিন পরে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তর একটি নির্দেশিকা জারি করে।
যদিও এখনও ছাত্র নির্বাচন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নয়নি রাজ্য সরকার। এর আগে তৃণমূলনেত্রী রমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় প্রধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার ছাত্রভোট নিয়ে বার্তা নিয়েছেন। ইত্ত তা কার্যকর হয়নি। গত বছর ২৮ প্রগস্ট টিএমসিপি-র প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনই রামুল নেতৃত্ব জানিয়েছিলেন, পুজোর পরে ছত্রভোট হবে এবং তখন মহিলাদের জন্য বিশেষ সংরক্ষণ এনে বিধিও তৈরি হবে। তারপরে বছর ঘুরে গেলেও এ নিয়ে আর সরকারি স্তরে প্রকাশ্যে উচ্চবাচ্য হয়নি।
এই মুহূর্তে রাজ্যের অন্তত পাঁচশোটি কলেজ ও ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রভোট বকেয়া রয়েছে। যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, রবীন্দ্র ভারতীতে ২০১৯-২০ সালে শেষবার ভোট হয়েছে। বাকি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-এর পরে কোনও ভোট হয়নি। পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্য একটি আইন এনে দু'বছর অন্তর ছাত্রভোট করার সিদ্ধান্ত নেয়। তা-ও এখনও কার্যকর হয়নি। এই আবহে রাজ্য কী ভাবে ছাত্রভোট না-হওয়ার দায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপরে চাপিয়ে দিল, তাতে বিস্মিত শিক্ষা-প্রশাসকদের অনেকেই।
এ দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্বাচন সংক্রান্ত রাজ্যের বিধি চ্যালেঞ্জ করে একটি মামলায় এ দিন অভিযোগ তোলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট গঠিত লিংডো কমিশনের গাইডলাইন নির্বাচন সংক্রান্ত বিধি তৈরি করেছে রাজ্য। বিচারপতি সুজয় পাল ও বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে সবার আগে এই মামলার নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি। তাই আগামী ১১ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানির দিন স্থির করা হয়েছে। আদালত মনে করছে, বিধি নিয়ে তৈরি জটিলতা না-কাটলে, ভোট করার ক্ষেত্রে বাধা হবে।