হাসপাতালের কৃতিত্ব কে নেবে, ফিতে কাটতেই সমাজমাধ্যমে ‘যুদ্ধ’
আনন্দবাজার | ২৭ আগস্ট ২০২৫
প্রশাসনিক সভা থেকে মঙ্গলবার ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই ভাতারের মতো মফস্সল এলাকায় এই সাফল্যের কৃতিত্ব নিতে সমাজমাধ্যমে তরজা শুরু হয়েছে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর।
২০২০-এ স্বাস্থ্য দফতর ভাতারে স্টেট জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণের অনুমোদন দেয়। পরের বছর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ দিন বর্ধমানে প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রকল্পের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন। তার পরেই সমাজমাধ্যমে এই সাফল্যের জন্য ভাতারের প্রাক্তন বিধায়ক বনমালী হাজরাকে শুভেচ্ছা জানান তাঁর অনুগামীরা। বনমালীর ছেলে ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ মহেন্দ্র হাজরার বক্তব্য, ‘‘হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে। ২০১১-১৬ পর্যন্ত বিধায়ক থাকাকালীন বাবা হাসপাতালের শয্যাবৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট ছিলেন। ২০১৭-এ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে ভাতার হাসপাতালের উন্নতির বিষয়টি ফের তুলে ধরেন। পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজের প্যাডে বাবাকে চিঠি লিখে ভাতার হাসপাতালকে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত করার বিষয়টি জানিয়েছিলেন।’’ বনমালীরও দাবি, ‘‘বর্ধমানের পুলিশ লাইনে এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন 'বনমালীদা আপনার দাবি মেনে হাসপাতালের উন্নয়ন করে দিয়েছি’।’’
এ দিকে, ভাতারের বর্তমান বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীর অনুগামীদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী ভাতার এলাকার মানুষের কথা ভেবে, হাসপাতালের রোগীর চাপের বিষয়টি উপলব্ধি করে, হাসপাতালের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। ২০২১-এ হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বর্তমান বিধায়কের চেষ্টায় হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে। মানগোবিন্দের দাবি, ‘‘প্রয়াত ভোলানাথ সেনের চেষ্টায় আজ থেকে পাঁচ দশক আগেই ভাতারের বুকে গ্রামীণ হাসপাতাল ও দমকলকেন্দ্র নির্মাণ হয়েছিল। সেই হাসপাতাল আজ আরও উন্নত স্তরে পৌঁছল মুখ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টায়।’’ সঙ্গে দাবি করেন, ভোলানাথ সেন ভাতারে আলিনগরে একটি স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। যদিও তা শেষ করতে পারেননি। পরে বনমালীবাবু বিধায়ক থাকাকালীন স্টেডিয়ামটি উন্নত করার জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু স্টেডিয়ামের উন্নতি হয়নি। ভাতার ব্লকের পূর্ব দিকের শেষ প্রান্তে মাঠের মাঝে নাসিগ্রাম মৌজায় চার কোটি টাকা খরচে যে স্টেডিয়াম নির্মিত হয়, সেটি এখন আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। খেলার মাঠ জঙ্গলে ভর্তি। সেখানে গরু চরছে। এ নিয়ে বনমালীর বক্তব্য, ‘‘আলিনগরে জায়গার সমস্যা ছিল। ভাতার সংলগ্ন এলাকায় স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা না পাওয়ায় নাসিগ্রামের সরকারি জমিতে স্টেডিয়াম নির্মাণ হয়েছিল।’’
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকৃতিরঞ্জন শাসমল বলেন, ‘‘হাসপাতালের ভবনের উদ্বোধন হলেও পরিষেবা শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এখনও তৈরি হয়নি। ইতিমধ্যে কিছু চিকিৎসক নিযুক্ত হয়েছেন। তাঁরা গ্রামীণ হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত থেকে পরিষেবা দিচ্ছেন। সিজারের পাশাপাশি, চক্ষু ও অস্থি বিভাগে উন্নত পরিষেবা মিলবে।’’ ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ অনিরুদ্ধ সামন্ত মনে করেন, ‘‘ এ বার ভাতারের পাশাপাশি, মঙ্গলকোট, মন্তেশ্বর, নানুরের মানুষজনও নতুন হাসপাতালে পরিষেবা পাবেন। বর্ধমানে রোগীদের রেফারের প্রবণতা অনেকটা কমবে।’’