মুড়িগঙ্গার বুক চিরে সেতু গড়ার স্বপ্ন জেগেছে বহু বছর ধরে। বার বার আটকে থেকেও থেমে যায়নি সেই আশা। অবশেষে সেই স্বপ্নের পথে প্রথম পদক্ষেপ— নদীর ঢেউয়ের নীচে শুরু হয়েছে মাটি পরীক্ষা। কোথায় শক্ত মাটি, কোথায় নরম স্তর, কতটা গভীরে খুঁটি পুঁতলে সেতু টিকবে— সে সবের উত্তর খুঁজছেন বিশেষজ্ঞেরা। পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেই ঠিক হবে বহু প্রতীক্ষিত গঙ্গাসাগর সেতুর নকশা।
কাকদ্বীপের লট-৮ ঘাট থেকে সাগরদ্বীপের কচুবেড়িয়া পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু তৈরি হলে আমূল পাল্টে যাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বহু বছর ধরে থমকে থাকা প্রকল্পে এ বার দ্বিতীয় দফায় দরপত্র প্রকাশের পরে ফের গতি এসেছে। প্রায় ১,৪৩৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পের দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ১৭ সেপ্টেম্বর।
গত বছর নভেম্বরে প্রথম দফায় দরপত্র আহ্বান করা হলেও পর্যাপ্ত সংস্থা এগিয়ে না আসায় তা কার্যকর হয়নি। পরে ফের নতুন করে আহ্বান করা হয় দরপত্র। একই সঙ্গে সেতুর সংযোগ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াও প্রায় শেষের পথে। কাজের মান নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘রাইটস’কে তৃতীয় পক্ষ হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মাটি পরীক্ষা থেকে নির্মাণের প্রতিটি ধাপে নজরদারি করছে তারাই।
স্থানীয়দের আশা, এক বার সেতু তৈরি হলে ভেসেল বা নৌকোয় মুড়িগঙ্গা পার হওয়ার ৪৫ মিনিটের যাত্রা নেমে আসবে কয়েক মিনিটে। পর্যটন, চিকিৎসা পরিষেবা, পণ্য পরিবহণ— সব ক্ষেত্রেই আসবে গতি। স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন জানা বলেন, “বছরের পর বছর ফেরির লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সারা দিনে হাতেগোনা কয়েক ঘণ্টা ভেসেল চলে। বাকি সময় নৌকোয় যাতায়াত করতে হয়। সেতু হলে সময় বাঁচবে, রাতদিন যাতায়াত সম্ভব হবে।”
মথুরাপুরের তৃণমূল সাংসদ বাপি হালদার বলেন, “গঙ্গাসাগর সেতু আমাদের এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের এই প্রকল্প খুব তাড়াতাড়ি বাস্তবায়িত হতে চলেছে। মাটি পরীক্ষার কাজ শুরু হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে এক ধাপ এগোনো গেল। সেতু তৈরি হলে শুধু স্থানীয় মানুষই নন, লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী ও পর্যটকও উপকৃত হবেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অর্থনীতিতে এর প্রভাব হবে বিরাট।”
পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক জানান, মাটি পরীক্ষার ফলাফলের উপরে নির্ভর করে নকশা ও প্রযুক্তিগত পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে চাইছেন তাঁরা। সেতুর কাজ শুরু হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তা শেষ করার জন্য সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি ওই আধিকারিকের।